আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াল শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

Looks like you've blocked notifications!
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

মূল দাবি থেকে সরে এসে আন্দোলন প্রত্যাহার করল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরা এ ঘোষণা দেন। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানান, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী তাঁদের সব দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। সেই আশ্বাসের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে আগামীকাল রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাবিপ্রবি দিবস যেন যথাযথভাবে পালন করা হয়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখপ্রকাশের পরামর্শও দেন তিনি।

তার আগে গতকাল বিকেল থেকে সিলেট সার্কিট হাউজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস আহমেদ তুহিন অংশ নেন।

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আচার্য যেহেতু একজন উপাচার্যকে নিয়োগ দেন কিংবা অপসারণ করেন, সেহেতু আমরা বিষয়টি আচার্যকে অবহিত করব।’

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা তাঁদের বক্তব্য, দাবি-দাওয়া ও পুরো ঘটনা তুলে ধরেছেন। ভালো আলোচনা হয়েছে, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি।’

গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনের আট দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।

এর ১৪ দিন পর গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে পরপর দুদিন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে ও চলবে।’ এদিন তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উপাচার্যের পক্ষ নেওয়াদের হুঁশিয়ারি দেন।  এরপর গতকাল শুক্রবার সকালে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে সিলেট পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

আজ শনিবার সকালে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলমান ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।