জাবির বাসে শিক্ষার্থীকে মারধরের পর মেরে ফেলার হুমকি, বিচারের দাবি

Looks like you've blocked notifications!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে একদল সিনিয়র শিক্ষার্থী এক জুনিয়রকে মারধরের অভিযোগের ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি : এনটিভি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বাসে একদল সিনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক এক জুনিয়রকে মারধরের অভিযোগের ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, গত ১২ মে রাজধানীর টেকনিক্যাল এলাকায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ভুক্তভোগী মো. সংগ্রাম ইসলাম গণিত বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী সংগ্রাম ইতোমধ্যে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আদনান শাকিলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১২ মে ক্যাম্পাস থেকে রাজধানীর বঙ্গবাজারগামী বিকেল চারটার বাসে উঠেছিলেন গণিত বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সংগ্রাম ইসলাম। টেকনিক্যাল মোড়ে পৌঁছানোর পর বাস ড্রাইভার ব্রেক কষলে সংগ্রাম সামনের দিকে ঝুঁকে যায় এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহাদাতের গায়ের ওপর পরে। এতে করে সংগ্রাম মাথায় ও হাতে আঘাত পায়। আচমকা ব্রেক করার কারণ জানতে চেয়ে আহত সংগ্রাম ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলে ৪৭তম ব্যাচের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান শাকিলের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়।

শাকিল তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয় এবং তারাও নামে৷ বাস থেকে নামার পর সংগ্রাম তার পরিচয় দেয় এবং তাদের পরিচয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাকিল তাকে ঘুষি-থাপ্পড় মারে। সংগ্রাম প্রতিরোধ করতে গেলে শাকিলের সাথের কিছু শিক্ষার্থী তার হাত আটকে ফেলে। মারধরের একপর্যায়ে শাকিল ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে আসে এবং স্ট্যাম্প দিয়ে সংগ্রামের পা ও পিছনে আঘাত করে৷ এতে করে স্ট্যাম্প ভেঙে যায়।

পরবর্তীতে সংগ্রামের বন্ধু আশিক বাস থেকে নেমে এসে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। আহত সংগ্রামকে ফেলে শাকিল ও তার বন্ধুরা বাসে উঠে চলে যায় এবং ‘তুই কামাল উদ্দিন হলে থাকিস না? তুই শুধু ক্যাম্পাসে আয়, তোরে মেরে ফেলবো’ বলে হুমকি দেয়।

মানববন্ধনে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইরফানুল ইসলাম ইফতুর সঞ্চালনায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গণিত বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক বলেন, ‘বাসে আমি ও সংগ্রাম একসাথে বসেছিলাম। ড্রাইভার হঠাৎ ব্রেক করায় ব্যাথা পাওয়ায় বাস চালকের সাথে সংগ্রামের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় বাসে থাকা সিনিয়র তার কাছে পরিচয় চাইলে সে পরিচয় না দিলে তারা তাকে কলার ধরে বাস থেকে নামিয়ে পাঁচ-ছয়জন মিলে মারধর করে।’

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুজিবুর রহমান শিশির বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে চলাচলের জন্য ক্যাম্পাসের বাসগুলো দেওয়া হয়েছে। সেই বাসে ক্যাম্পাসের এক গ্রুপ শিক্ষার্থী সংগ্রামকে আহত করেছে। বাসের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, সংগ্রাম নির্দোষ ছিল। অতি উৎসাহিত হয়ে নিজের সিনিয়র ভাব প্রকাশ করার জন্য একজন সংগ্রামকে মারতে আসে। তার সাথে আরও কয়েকজন যুক্ত হয়। এসময় তারা তাকে ভোতা অস্ত্র দিয়ে আহত করে, যা ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত।’

ভুক্তভোগী সংগ্রাম ইসলাম বলেন, ‘কিছু বলার ভাষা আমার নেই। আমাকে তারা নৃশংসভাবে মেরে আহত করেছে। আমার চিকিৎসা এখনও চলছে। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, যারা আমাকে মেরে আহত করেছে, তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক।’

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু হামলাকারীদের সবাইকে ওই শিক্ষার্থী চিনতে পারেননি এ জন্য তদন্ত করতে একটু সময় নিচ্ছি। সুষ্ঠু বিচারের জন্য যা যা করার প্রয়োজন আমরা সবটুকু করবো।’

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সহকারী প্রক্টর, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমি ভুক্তভোগী সংগ্রাম ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল অফিসে কথা বলেছি। তখন পর্যন্ত তারা মারধরকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। আমি বাসের হেলপার ও ড্রাইভারের সাথে এবিষয়ে কথা বলেছি এবং সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে টেকনিক্যাল এলাকার পুলিশের সাথে কথা বলেছি। আজকে সংগ্রাম আরেকটা অভিযোগপত্র দিয়েছে এবং আদনান শাকিল নামের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “অভিযোগ করার পর আমরা শাকিলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে পাইনি। এবিষয়ে তাকে শোকজ করা হবে। এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”

মারধরের বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে আদনান শাকিলকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।