ঢাবির সেই রনি কেন এখন চা বিক্রেতা!

Looks like you've blocked notifications!
ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। ছবি : এনটিভি

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলন করে দেশজুড়ে মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শহিদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ছয় দফা দাবিতে একাই অনশন কর্মসূচি করে পুরো ক্যাম্পাসেও আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সেই রনি এখন চা বিক্রেতা! কিন্তু কেন, আসুন জেনে নিই…

ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি সবসময় ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করতেই বেশি পছন্দ করেন এবং ইতিপূর্বে তাঁকে তাই করতে দেখা গেছে। তিনি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অনেকটা ছদ্মবেশে কয়েকমাস ধরে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেছেন। টানিয়েছেন প্ল্যাকার্ড। যেখানে লেখা, ‘এখানে চা মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।’ পরে তিনি নিজেই ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন।

রনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, রেলওয়ে আন্দোলনের সময় বা এর পরে বিপদ-আপদে তিনি অনেক অনৈতিক সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব পেয়েছেন, যেগুলো বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছেন। সঠিক পন্থায় উপার্জনের মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। আর সেই শুদ্ধ রাখার মাধ্যম হিসেবেই বেছে নিয়েছেন এই চা বিক্রির পেশাকে।

এনটিভি অনলাইনকে রনি বলেন, ‘চা বিক্রির শুরুটা অনেকটা টাকার প্রয়োজন থেকেই বলা যেতে পারে। আর অনেকেই জেনে থাকবেন, রেলওয়ে আন্দোলনের পর আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে যাই। এসময় দেখা যায়, অনেকেই আমার সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চায় এবং অনেক সুযোগ দিতে চায়। তখন দেখলাম যে, এই সুযোগগুলো আমার নীতির সঙ্গে যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তাদের ফিরিয়ে দিলে দেখা যাচ্ছে, সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে বা তারা মানুষ পাঠিয়ে দিয়ে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। এগুলো থেকে বাঁচার জন্য আমার কিছু না কিছু তো করতে হতো, সেজন্যই আমি এই ব্যবসা শুরু করলাম।’

রনি আরও বলেন, ‘যারা আমাকে সুযোগ দিতে চেয়েছিল, তাদের আমি এটা বোঝালাম যে, টাকা মেরে খাওয়ার চাইতে জুতা সেলাই করা, রিকশা চালানো বা চা বিক্রি করা অনেক সম্মানের। এজন্য আমি সেটাই করছি। এতে আমি দোষের কিছু দেখছি না। আর যারা আমাকে এরকম অফার করেছিল, তাদের থেকে বাঁচার জন্যই আমি প্রফেশনালি এই কাজটা শুরু করেছি। সে জায়গা থেকে আমার মনে হয় যে, চায়ের ব্যবসায়টা খুব ভালো। আর আমি ব্যাপারটা খুব ইনজয় করছি।’

চা বিক্রিকে আত্মশুদ্ধি আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করে রনি বলেন, ‘আমার চা বিক্রির অন্যতম মূল উদ্দেশ হলো যে, আমি আত্মশুদ্ধির আন্দোলন করছি। চা বিক্রিও আমার একটা আন্দোলন। কারণ, অন্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আগে, অন্যের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলার আগে, নিজেকে আগে ভালো হতে হবে। নিজেরই আত্মশুদ্ধ হওয়া উচিত। সবাই জানেন, যখন মানুষের ক্রাইসিস অবস্থা থাকে তখন বিভিন্ন ধরনের সুযোগ আসতে থাকে। যখন এভাবে সুযোগ আসতে থাকে তখন মানুষ লোভে পড়ে যায় এবং তার পা পিছলে যায়। আমি চাই না যে, আমার সঙ্গে এমনটা হোক। আমি লোভে পড়তে চাচ্ছি না। সেজন্য নিজেকে আত্মশুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ক্ষুধা থেকে মুক্তি চাচ্ছি এবং স্বাবলম্বী হতে চাচ্ছি।’

একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হয়েও চা বিক্রির বিষয়ে রনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে একটা চিন্তাভাবনা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কেন চা বিক্রি করবে? এখন আমার কথা হচ্ছে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চা বিক্রি করতে পারবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিকশা চালাতে পারবে না, ছোটখাটো কাজ করতে পারবে না, আপনারা তাকে অসম্মান করবেন। ছোট ব্যবসা করতে পারবে না, তাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। শুধু শুধুই কেন তাকে আপনারা চাকর বানাতে চাচ্ছেন? কেন শুধু চাকরিই করতে হবে তার? আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যে ব্যক্তি চা বিক্রি করছে তার চা তো আগামীকাল একটা ব্র্যান্ড হয়ে যেরে পারে। তার এই চা—ই তো একদিন শিল্প হয়ে যেতে পারে। এই কথা কেন চিন্তা করছেন না? বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে যদি আজ রিকশা চালায়, তাহলে দেখবেন সে আগামীকাল রিকশাটাকে একটা আর্ট হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে।’

এ পেশায় প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে রনি বলেন, ‘আমি একমাস ধরে চা বিক্রি করছি। যদিও তিন মাস আগে থেকেই আমি টিএসসি এবং ভিসি চত্বরের চাওয়াওয়ালাদের চা নিয়ে সেগুলো বিক্রির অভিজ্ঞতা নিয়েছি। তখন অবশ্য ছদ্মবেশে এটা করতাম। পরবর্তীতে দেখলাম অনেকেই এটা নেগেটিভলি নিচ্ছে। এজন্য আমি ভাবলাম যে, এটা আসলে গোপন রেখে লাভ নেই। যদি না জানালে অসুবিধার কারণ হয়, তাহলে বসে থেকে লাভ নাই, ব্যাপারটা সবাইকে জানিয়ে দেই, আসলে আমি কী চাই।’

প্ল্যাকার্ডের লেখার বিষয়ে মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘এখানে চা মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়’ এটার ব্যাখ্যা যদি দিতে চাই, তাহলে আমার মনে হয় যারা এখানে চা খেতে আসবে তারা এমনিতেই বুঝে যাবে। এটা আসলে দূর থেকে বোঝা যাবে না। এটা কেউ বুঝবেও না। বিষয়টা এমন যে, যদি ডিমান্ডেবল কোনো টপিক বা প্রবলেম, যা অনেক মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত সেই প্রবলেমের কোন সল্যুশন আপনারা বা কেউ যদি দিতে পারেন, তাহলে আমি তার বিনিময়ে চা পে করব। তা হতে পারে দশ-বিশ বা এক-দুই হাজার কাপ।’