ঢাবির হলে সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে

Looks like you've blocked notifications!
বাঁ দিক থেকে পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত তুষার, সিরাজুল ও রিফাত। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্য সেন হলে সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিন ছাত্রলীগকর্মীর শাস্তি চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক। 

আজ বুধবার হলের হাউজ টিউটর ড. আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া। 

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় হলের রিডিংরুমের সামনে সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক তাওসিফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভার পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

অভিযুক্তরা হলেন মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তুষার হোসাইন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন রিফাত এবং ফাইনান্স বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সিরাজুল ইসলাম।

হল ছাত্রলীগ সভাপতি মারিয়াম জামান সোহানের অনুসারী তুষার ও রিফাত। মারিয়াম সোহান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের রাজনীতি করেন। অন্যদিকে, সিরাজুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের অনুসারী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের রাজনীতি করেন।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে হলের দক্ষিণ ব্লকের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হল ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান সোহান এবং সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হলের রিডিং রুমে যাচ্ছিলেন। তখন আমি সবার পেছনে ছিলাম। প্রথম রিডিংরুমে গিয়ে শুনলাম উনারা রিডিংরুমে চাকরির পড়াশোনা করা ছাত্রদের বলছেন, যাতে বই রেখে সিট দখলে নিয়ে ৩০ মিনিটের বেশি বাইরে না থাকেন। ৩০ মিনিটের বেশি হলে বই সরিয়ে সেই সিটে বসতে বললেন নতুন কেউ পড়তে গেলে। দ্বিতীয় রিডিংরুমে গিয়েও একই কথা বলেন। আমি দরজার কাছেই ছিলাম। একই নির্দেশনা হওয়ায় আমি নিজে নিজে অনেক ছোট করে বললাম-‘অহ দ্যাট সেইম লেকচার।’ পরে বের হয়ে চলে আসছিলাম। সবাই ভেতরে থাকলেও তুষার হুসাইন, মুনতাসির মামুন রিফাত এবং সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন বাইরে ছিলেন। তাঁরা আমার লেকচার শব্দটি শোনেন এবং আমার পথ অবরুদ্ধ করেন। আমাকে বারবার জেরা করতে থাকেন কি লেকচার বল। লেকচার না শুনে চলে আসছিস কেন? আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বলি আমি দৈনিক অবজারভারের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার।’

ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘তারপর তুষার হুসাইন, মুনতাসির মামুন রিফাত এবং সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আমাকে ও সাংবাদিক সমিতি, সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। তুষার হুসাইন আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে একজন আমাকে ধাক্কা দেন। আমার ধারণা, তুষার হুসাইনের বিরুদ্ধে গত ৫ অক্টোবর ডেইলি অবজারভারে ছিনতাইয়ের নিউজ করায় তিনি আগে থেকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বের হয়ে এলে তাদের আমি বিষয়টা অবগত করি। তাদের উপস্থিতিতেই আমাকে শাসায় এবং উগ্রভাবে বারবার তেড়ে আসে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত তুষার হোসাইন বলেন, ‘গতকাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে রিডিংরুমে যাই। হলের একটা ছেলে নিজে নিজে আজেবাজে ভাষায় মন্তব্য করে বের হচ্ছিল। তখন আমাদের একজন সিনিয়র তাকে বলে যে তুমি এরকম কেন করছ। তখন সে সাংবাদিক পরিচয় দিলে আমি তাকে বলি, তুমি কি সাংবাদিকতার পাওয়ার দেখাচ্ছ?’

ভুক্তভোগী ও সাংবাদিক সমিতির নেতাদের গালিগালাজ ও ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি বা কেউ তাঁকে ধাক্কা দেয়নি। গালিগালাজও করিনি।’

আরেক অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে কিছু হয়নি। আমার ছোট ভাই তুষারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। ও আমার হলের ছোট ভাই না, ওর সঙ্গে ঝামেলা করব কেন?’

অভিযুক্ত মুনতাসির মামুন রিফাত বলেন, ‘ও রিডিংরুম থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বলেছে যে, ‘বড় বড় লেকচার দিচ্ছে। তখন আমি বলেছি যে, কি বললা তুমি আবার বলো। তখন কিছু জুনিয়র উল্টা-পাল্টা কথা বলেছে। আমি ওদের থামিয়ে দিয়েছি।’

হল ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান সোহান বলেন, ‘আমরা রিডিং রুম থেকে বের হয়ে কোনো ধাক্কাধাক্কি বা গালাগালি শুনিনি। একটু জটলা দেখেছি। পরে আমি তাওসিফকে বলেছি, তুমি আমার সঙ্গে আস। আর তুষারদের সরিয়ে দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে জানতে হল ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি এবং আমি হল প্রভোস্টকে বলে দিয়েছি, যেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ 

সূর্য সেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর প্রতিবেদন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকা থেকে প্রজিত দাশ নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, ১৭ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই করেছিল অভিযুক্ত তুষার ও তার কয়েকজন সহযোগী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করলে পরে ছিনতাইয়ের জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে এমন কাজ আর করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়েছিলেন।