নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি

Looks like you've blocked notifications!
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে শিক্ষার্থীরা। ছবি : এনটিভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় গাড়ির নিচে পড়া রুবিনা আক্তারকে শাহবাগ থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত টেনে নিলে তার প্রাণহানির পর থেকে উত্তাপ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। এরই মধ্যে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ আর নানা কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন। 

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল এবং উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে বহিরাগত ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানাচ্ছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ১১ দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

এরপর তারাসহ কয়েকশ শিক্ষার্থীকে টিএসসি থেকে শুরু করে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, কলা ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভিসি চত্ত্বর, আইন অনুষদ ও কার্জন হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে-প্রশাসন কী করে?’, ‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘অনিয়মের ঠাই নাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘বিবেককে প্রশ্ন করি, এবার যদি আমরা মরি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মিছিলের আগে বিক্ষোভ সমাবেশে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিনা সবার পক্ষে ১১ দফা দাবি এক লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন।

আনিকা তাহসিনা বলেন, ‘এই শিক্ষাঙ্গণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করলাম। যদি আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের স্বপক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি নিয়ে দিতে বাধ্য হব।’

সেগুলো হলো—

১. বিশ্ববিদ্যালয়ে সব যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা।

২. রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা।

৩. ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুধু নিবন্ধিত রিকশা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা।

৫. ভ্রাম্যমাণ দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন থেকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা এবং ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে ন্যূনতম ৩০০ ডাস্টবিন স্থাপনের ব্যবস্থা করা।

৬. প্রথম বর্ষ থেকে সব শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

৭. মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা।

৮. সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা।

৯. প্রক্টর কার্যালয়ে জমে থাকা সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।

১০. নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রক্টোরিয়াল কার্যালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

১১. নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে রুবিনা আক্তার মোটরসাইকেলে করে হাজারীবাগ যাওয়ার পথে শাহবাগ থানা পার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলামের মাজার এলাকায় এলে একটি প্রাইভেটকার পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রুবিনা আক্তার গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় গাড়ির বাম্পারে তার পোশাক আটকে যায়। পরে ওই চালক গাড়ি না থামিয়ে রুবিনাকে নিয়েই বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যেতে থাকেন। এরপর সাধারণ জনতা নীলক্ষেত মোড়ে ঢাবির মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ এলাকায় গাড়িটি আটকিয়ে রুবিনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে তিনি মারা যান।