নড়াইলে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

Looks like you've blocked notifications!
নড়াইলে শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়ে ছবি তুলছে কয়েকজন। ছবি : সংগৃহীত

নড়াইলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা শিক্ষা অফিস। এক ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কলেজ শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মুঠোফোন নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা নিষেধ থাকার পরও শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইল আনছে এবং ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত পোস্ট, লাইক ও শেয়ার নিয়ে বিব্রতকর ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

চিঠিতে জানা হয়, সুধী সমাজের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন ব্যবহারের বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি উঠেছে। এজন্য নড়াইলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হলো—মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলেজ ও মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুঠোফোন আনতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর কাছে মুঠোফোন পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ ছাড়া ঈদুল আজহার ছুটির পর এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়। আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন শিক্ষা প্রশাসনের ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন।

এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। এরই মধ্যে ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে।

সে সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়।

তখন পুলিশ ওই ছাত্রের সঙ্গে অধ্যক্ষকেও থানায় নিয়ে যায়। যদিও অধ্যক্ষকে আটক করা হয়নি বলে জানান নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীর।

এ ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল থানায় মামলা করেন।

মামলার পর সোমবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন টিংকুকে দলের নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।