দ্বিতীয় পর্ব-০২ 

৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি : পরীক্ষার হলে যেভাবে উত্তর করবেন 

Looks like you've blocked notifications!

আগামী ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই বিসিএসে আবেদন করেছেন চার লাখ ৭৫ হাজার জন। নিয়োগ দেওয়া হবে দুই হাজার ১৬৬ জনকে। পরীক্ষার বেশি দিন বাকি নেই। এই সময়টা বিসিএসপ্রত্যাশী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার আগে শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোকপাত করেছেন ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান (সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট)।

বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। যেহেতু বিসিএস পরীক্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষা সেহেতু একটি সুষ্ঠু প্রস্তুতি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে। প্রস্তুতির প্রাথমিক দিক নিয়ে প্রথম পর্বে আলোচনা করেছি। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে পরীক্ষার আগের দিন ও পরীক্ষার দিন যা করবেন সেসব নিয়ে।

পরীক্ষার আগের দিন

পরীক্ষার আগের দিন যেসব টপিক সবচেয়ে কম মনে থাকে, সেগুলো পড়ুন। যেমন- আমি আগের দিন ইংরেজি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য ও সংবিধান পড়েছি। এ ছাড়া শব্দভাণ্ডার পড়েছি। পরীক্ষার আগের দিন রাতে বা সকালে সর্বশেষ যে কাজটি করবেন সেটা হলো- গত এক মাসে পড়ার সময় যে হ্যান্ডনোটটি আপনি নিজে তৈরি করেছেন সেটি পড়ে যান।

পরীক্ষার হলে যেভাবে উত্তর করবেন

পরীক্ষার হলে বৃত্ত ভরাট করাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেকে অনেক বেশি জেনেও শুধু অসতর্কতা আর মিস ম্যানেজমেন্টের কারণে প্রিলি ফেইল করতে পারেন। অন্যদিকে ভালো টাইম ম্যানেজমেন্ট আর কৌশল অনুসরণ করলে আপনি অপেক্ষাকৃত কম জেনেও প্রিলিতে পাস করে যেতে পারেন।

পরীক্ষার হলে প্রথমেই কয়টি উত্তর করেছেন বা অন্যরা কয়টি করেছে— সে হিসাব করতে যাবেন না। অনেকেই বলাবলি করতে পারে- এবার প্রশ্ন সহজ বা কঠিন হয়েছে, এত নম্বর পেলে টেকাবে, এত নম্বরে টেকাবে না। এসব কথায় একেবারেই কান দেবেন না। আপনি আপনার মতো করে উত্তর করে যান। প্রথম দফায় যেসব প্রশ্ন আপনি ৯০-১০০ ভাগ নিশ্চিত সেসব উত্তর করে ফেলুন।

যেসব টপিকের ওপর আপনি একেবারেই প্রস্তুতি নিতে পারেননি, সেসব প্রশ্ন শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে উত্তর করবেন না। এভাবে ২০০টি প্রশ্নের উত্তর করার চেষ্টা করার পর যেসব প্রশ্ন উত্তর করেননি, সেগুলো আবার চেষ্টা করুন। দেখবেন কিছু প্রশ্নের উত্তর মনে এসে গেছে। এবার হিসাব করে দেখুন, কতগুলোর উত্তর করলেন। যদি ১৩০-১৪০টি উত্তর করা হয়ে থাকে, তাহলে আর না উত্তর করলেও চলবে। এরকম হলে আবার দেখে নিন। এবার যেসব প্রশ্ন আপনি ৮০-৯০ ভাগ নিশ্চিত সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে করে মোট ১৩০-১৪০টি উত্তর করা হয়।

এর বেশি উত্তর করাটা আমার কাছে বেশি ঝুঁকির মনে হয়েছে। উপরের এই কৌশল অনুসরণ করে, আমি তিনটি প্রিলির তিনটিতেই পাস করেছিলাম। তবে এটাই সফলতার একমাত্র পথ নয়। একেকজন একেকভাবে সফলতা লাভ করে। সুতরাং সবারটা শুনে এর সঙ্গে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে একটি কৌশল ঠিক করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

পড়া মনে থাকে না কী করবেন?

পড়া মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। ঘাবড়ানোর কারণ নেই। মনে রাখার জন্য যা যা করতে পারেন, একটি বোর্ড কিনে সেখানে লিখে লিখে নিজে নিজে লেকচার দিন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে রুমের দেয়ালে, বারান্দায়, ফ্রিজের গায়ে, টিভির সাইডে, অর্থাৎ যেখানে আপনার অবসর সময়ে চোখ যায় সেখানেই টাঙিয়ে দিন। ছোট নোট প্যাডে লিখে রাখুন, পরে না দেখে রিভাইস দেয়ার চেষ্টা করুন। গ্রুপ স্টাডি করে আলোচনা করে পড়তে পারেন। প্রতি ৪০-৫০ মিনিট পরে পাঁচ-১০ মিনিটের পড়ার বিরতি দিন। বিরতিতে দেয়ালে টাঙানো বাংলাদেশ ও বিশ্বের ম্যাপগুলো দেখতে থাকুন। দেখবেন মনের অজান্তেই অনেক কিছু মনে থেকে গেছে। বইয়ের লেখার পরিবর্তে বিভিন্ন ছবি, ভিডিও থেকে যেসব বিষয় শেখার সুযোগ আছে, শিখে নিন। যেমন- আমি বিভিন্ন শিল্পীর চিত্রকর্ম, স্থাপত্য, স্মৃতিস্তম্ভগুলোর ছবি ইন্টারনেট থেকে বের করে মনে রাখার চেষ্টা করতাম।

এ ছাড়া পড়ার সময় মানচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে দেখে পড়বেন। কোনো কিছু সহজে মনে রাখার আরেকটি কার্যকরী টেকনিক হচ্ছে কোনো জানা জিনিসের সঙ্গে অজানা বিষয় মিলিয়ে পড়া।

আরেকটি কথা, পড়ার সময় কল্পনাশক্তিকে বিস্তৃত করে দিন, একটু উপভোগ করে পড়ুন। যেমন- অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের নাম শুনলে যদি আপনার একটু শীত শীত লাগে বলে মনে হয়, তবেই বুঝব আপনি উপভোগ করে পড়ছেন। উপর্যুক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনার মনে রাখা সহজ হবে।

মো: আনিসুর রহমান (সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট)।