দেশগঠনে যুব শক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির

Looks like you've blocked notifications!
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন। ছবি : পিআইডি

দেশগঠনে যুব সমাজের শক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অনেক জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এসব আলোকিত গুণীব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে তরুণ শিক্ষার্থীরা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে- এ বিশ্বাস আমার আছে। জাতির অমিত শক্তি যুবসমাজ। যুবসমাজের শক্তিকে দেশ গঠনের কাজে লাগাতে হবে। উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। তোমরা সফল হও। আমি তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের হাতে ডিলিট ডিগ্রি তুলে দেন। ছবি : পিআইডি

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘তোমাদের আজকের এই অবস্থানের জন্য তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষক, সমাজ, দেশ ও জনগণের বিপুল অবদান। তোমরা এসবের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মেধা, প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে জাতির আশা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও বিবেক জাগ্রত রাখবে। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথানত করবে না। মনে রাখতে হবে সমাবর্তন শিক্ষার সমাপ্তি ঘোষণা করছে না, বরং উচ্চতর জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করছে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানচর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকর্মকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা এখনও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন।

শিক্ষামন্ত্রী গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। শহীদ ড. শামসুজ্জোহাসহ আরো অনেক শিক্ষকের রক্তের সাক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ ডিগ্রি অর্জন শেষে আপনারা এখন নতুন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছেন। সামনে আপনাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আপনাদের এই পর্যায়ে আসার জন্য এদেশের জনগণের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তাই আপনাদেরও তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ সময় গ্রাজুয়েটদের জনগণের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের হাতে ডিলিট ডিগ্রি তুলে দেন। ছবি : পিআইডি

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক এমিরেটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিবেশ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে না এমন দাবি করি না। শিক্ষকদের পাঠদানে অবহেলা, যথাসময়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে না পারা কিংবা পক্ষপাতমূলক ও অবাঞ্ছিত আচরণের অভিযোগ শোনা যায়।

আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি প্রতিবেদন ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্রদের দলীয় রাজনীতির অকল্যাণকর প্রভাব, সেশনজট সংস্কৃতির কারণে শিক্ষাজগতে নৈরাজ্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজে ও চিন্তায় স্বচ্ছতায় ও জবাবদিহিতার অভাব উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের বাধা বলে চিহ্নিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু উচ্চশিক্ষার মানের অবনতি হয়নি, পরীক্ষা পদ্ধতিও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অবস্থা এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একে অন্যের মূল্যায়নের ওপর আস্থা রাখতে চায় না।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে ১২ শর বেশি শিক্ষক। আগের তুলনায় ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনেক ভালো। আর শিক্ষা-সংস্কৃতির চর্চায় এ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।

উপাচার্য আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যেই সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ গড়তে তোমাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তোমরাই এদেশের ভবিষ্যতের প্রাণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন কর্মে প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক ড. চৌধূরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল বারী। পরে সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ছবি : পিআইডি

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান নামের দুটি অত্যাধুনিক আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠের পর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হয়।

দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সৈয়দ আমীর হল সংলগ্ন মাঠে হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করেন। এরপর তাঁকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে রাষ্ট্রপতি সাময়িক বিশ্রামের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে পৌঁছালে সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।