ঢাবিতে শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ভাঙচুর, ছাত্রলীগের হামলা

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা। ছবি : এনটিভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের স্থাপন করা শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ভাঙার অভিযোগে বামপন্থী গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।

আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টিএসসিতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জোটের অন্তত ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জোটসূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) চারজনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল কর্মসূচির ডাক দেয় বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। এ প্রেক্ষিতে টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ হয়ে আবার টিএসসিতে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার সময় ছাত্রলীগ হামলা চালায়। হামলার আগে জোটের কয়েকজন কর্মী ছাত্র ইউনিয়নের অর্থায়নে স্থাপিত রাজু ভাস্কর্যকে ঢেকে স্থাপন করা ‘মেট্রো ইজ ইন টিএসসি, থ্যাংক ইউ শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বিলবোর্ডটি ভাঙচুর করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়। যা জোটের কয়েকজন নেতাও স্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘পাহাড়ে চারজন ছাত্রনেতাকে গুলি করে মেরে ফেলার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের পক্ষ থেকে টিএসসিতে মশাল মিছিল ছিল। টিএসসি থেকে আমাদের মশাল মিছিলটা শুরু করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ হয়ে মিলন চত্বরে আমরা শেষ করার চিন্তা করি। কারণ, রাজু ভাস্কর্যের সন্ত্রাসবিরোধী চেতনাকে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা প্রোগ্রামটা মিলন চত্বরেই করার সিদ্ধান্ত নেই।’

সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘এরই মধ্যে, ভাস্কর্যকে একদম ঢেকে দিয়ে এর সামনে দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার বিলবোর্ড রাখাকে যারা রাজুর চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করা হচ্ছে বলে মনে করেছে, তাদের কিছু লোক গিয়ে ব্যানারটা ভাঙচুর করেছে হয়তো। কিন্তু, ছাত্রলীগ মনে করেছে যে, এটা আমাদের মিছিল থেকেই হয়েছে। আসলে মিছিল থেকে কেউ এটা করেনি। এরপর তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। মশাল মিছিলে আমাদের যে বাঁশগুলো ছিল, সেগুলো তারা কেড়ে নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে। তারা আমাদের ১০-১২ জনকে আহত করেছে। অনেকেই আঘাত পেয়েছে। তাদের কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক জাবীর আহমেদ জুবেল বলেন, ‘পাহাড়ের চারজন ছাত্রনেতাকে ব্রাশফায়ার করে মারার প্রতিবাদে আমাদের মশাল মিছিল ছিল টিএসসিতে। রাজু ভাস্কর্যকে ঢেকে রাখা শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বিলবোর্ডটা মিছিল শেষে আমাদের কিছু ছেলেপেলে ভাঙচুর করে। ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে এটা লাগিয়ে রেখেছে। আর এটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছাত্র ইউনিয়নের। কারণ, এটা ছাত্র ইউনিয়নের শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ। এ প্রেক্ষিতেই সাংগঠনিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে বারবার তাদেরকে বলা হয়েছে এটা সরিয়ে ফেলার জন্য। কিন্তু, এটা তারা সরায়নি। ওই জায়গা থেকে মূলত আমাদের কিছু ছেলেপেলে কাজটি করেছে। তারপর ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে, একজনের মাথায় হয়তো বেশি আঘাত লেগেছে।’

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশন উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাগানো শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বিলবোর্ডটা বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভেঙে ফেলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতির নাম হলো শেখ হাসিনা। স্টেশন উদ্বোধন উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা আনন্দে একটা ছবি বা বিলবোর্ড লাগিয়েছে, যেটা আগামীকাল উদ্বোধন হলেই সরিয়ে ফেলা হবে, আজকে তাদের প্রোগ্রাম শেষে সেটা ভাঙচুর করেছে।’

তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওদেরকে যে এপর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছে, এটাই তো অনেক কিছু। তারা অফিসিয়ালি যদি ক্ষমা না চায়, আমাদের শিক্ষার্থীরা অলরেডি রাস্তায় নেমে এসেছে, রাজপথে নেমে এসেছে, পরবর্তীতে কোন ঘটনা ঘটলে আমরা সামাল দিতে পারব না। আমরা তাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, তারা খুব তাড়াতাড়ি অফিসিয়ালি ক্ষমা চাক। নইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার ছবি ভাঙার অপরাধে ওদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে।’

উল্লেখ্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ছাত্রফোরাম হলো গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।