নৌকাকে হারাতে আওয়ামী লীগনেতার গোপন বৈঠক, ভিডিও ভাইরাল
কুষ্টিয়ায় নৌকার প্রর্থীকে হারাতে আওয়ামী লীগনেতা গোপন বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ওয়ার্ড নেতাদের নৌকাকে হারাতে এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতাতে নির্দেশ দেন। এই বৈঠকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এ নিয়ে কুষ্টিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নে। আগামী ৫ জানুয়ারি এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২১ ডিসেম্বর ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ফকিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে ওই দিন তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া দুই মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত আছেন। ভিডিওটি গোপনে রেকর্ড করেছেন একজন অংশগ্রহণকারী। সেখানে কুষ্টিয়ার একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক।
ভিডিওতে দেখা যায় ওমর ফারুক বলেন, আমাদের এখানে গ্যানজামের পর আসামিদের ছাড়ানোর জন্য আমি নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, নৌকার অবস্থানটা ভালো নেই। ওর (নৌকার প্রার্থী) যা অবস্থা তাতে ভোট চাওয়ার মতো, করার মতো অবস্থা নেই।
ওই ভিডিওতে ওমর ফারক বলেন, ওসব বিশ্লেষণে যাওয়া যাবে না। আমরা ঘোড়া প্রতীকে ভোট করছি। আমার নৌকার প্রার্থীর অবস্থা সবাই জানেন, তার পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। তাই নির্দেশনা আসছে ঘোড়া মার্কার (বিদ্রোহী প্রার্থী) ভোট করার।
ওমর ফারুক আরও বলেন, ‘আমি কোনো নেতার নাম বললাম না, তবে আমি উপরের দেওয়া সিগনাল মতো কথা বলছি।’
এ সময় উপস্থিত অন্য নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন- কে সিগনাল দিয়েছে আমি বলতে পারব না। এত বিশ্লেষণ করে বলা সম্ভব নয়। আমাকে বলেছে ঘোড়া প্রতীকের ভোট করতে, আমি ঘোড়া প্রতীকের ভোট করছি। আমার সাহস নাই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ভোট করার। আমি নৌকাকে জেতাতে পারছি না। যেহেতু আমাদের আওয়ামী লীগ করা একজন লোক দরকার, সেই হিসেবে এই নির্দেশনা দিয়েছে।
বটতৈল ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বৈঠকটি হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিকের অফিসে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এই বৈঠকে ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক। তিনি বলেন, ইউনিয়নের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কী করণীয় ঠিক করতে আমি সব ওয়ার্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলাম। সেখানে আমি কোনো কথা বলিনি। ওমর ফারুকই এসব বলেছেন। তবে ঘোড়া মার্কায় ভোট করার তার এ প্রস্তাব নেতারা সবাই মেনেও নেননি। আবু বক্কার বলেন, দুপুরের নামাজের আগে এসব আলোচনা হয়। পরে নামাজ পড়ে এসে সবাই খাওয়া-দাওয়া করেন।
ভিডিওর এই বক্তব্যের কথা স্বীকার করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুক বলেন, কেউ একজন গোপনে এই ভিডিও করেছেন। তবে কোন নেতা এই সিগনাল দিয়েছেন তার নাম তিনি বলেননি বলেও দাবি করেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা বলেন, এ রকম ভিডিওর ব্যাপারে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, দলের বিপক্ষে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ মোমিন মণ্ডল জানান, এই বৈঠকের ভিডিও আমিও দেখেছি। এটা খুবই নিন্দনীয়। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।