সীতাকুণ্ডে পুলিশের ওপর হামলা, দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এক ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সন্ত্রাসী অস্ত্র ও রেললাইন পাথর নিয়ে মহড়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মহাসড়ক অবরোধসহ নানান অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলে কিছু কিছু প্রার্থী ভোটারদের সরিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা শুরু করে। এতে বিভিন্ন জায়াগায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
এলাকাবাসীরা জানান, ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে সোনাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে চার মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় এসব প্রার্থীদের সমর্থকরা বাকবিতন্ডা থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে এক পক্ষ জোড়ামতল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টার এ অবরোধকালে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হলে পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার মেম্বার প্রার্থীকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর সকাল ১০টার দিকে অন্য দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা সোনাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের উদ্দেশে জড় হলে সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। দুপুর ১২টার পর থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে। এ সময় এ এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পৌনে ১টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। এ সময় তারা ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে চার থেকে পাঁচজন জন আহত হয়। সন্ত্রাসীদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হন মেম্বার প্রার্থী শাহাদাত হোসেন কামরুল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শিহাব উদ্দিন। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলা হয় ওই ইউপির তিন নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বাঁশবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে ব্যালট পেপারের তিনটি বই ছিনিয়ে নেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বিনিময় হয়। হামলার চেষ্টা হয় পার্শ্ববর্তী আরআর টেক্সটাইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করে। এরপরও দখলের চেষ্টা থেমে থাকেনি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকূল ফোরকানিয়া মাদ্রাসাতে হানা দিয়ে ব্যালট ছিনিয়ে নেয় এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা। হামলায় আহত হন দুই পুলিশ কনস্টেবল। তাঁদের সঙ্গে থাকা দুটি বন্দুকও ভাঙচুর করা হয়। এসব কারণে বাঁশবাড়িয়া তিন নম্বর ওয়ার্ডের উচ্চ বিদ্যালয় ও সাত নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকূল বায়তুল উলুদ ইসলামীয়া আদর্শ এতিমখানা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এদিকে বিভিন্ন স্থানে মোট চারজন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ১৪ জন আহত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে গুলিতে কেউ আহত হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। পুলিশ কোথাও গুলি চালায়নি। বরং প্রার্থীদের কতিপয় সমর্থক রেল লাইনের পাথর ও অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছে, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়েছে। পুলিশ শুধুমাত্র ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়াই এখানে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মুরাদপুর ইউনিয়নের পেশকার পাড়া এলাকায় কয়েকটি জাল ভোটের কথা শোনা গেছে। বাঁশবাড়িয়ায় তিন নম্বর ওয়ার্ড ও সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই করায় ওইসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেরা সংঘর্ষ করে মহাসড়ক অবরোধ করায় চার মেম্বার প্রার্থীকে আটক করা হয়েছে। তবে দেশের অন্যস্থানের তুলনায় এখানে বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।’