বাড়ছে বেলা, বাড়ছে লাইন
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বেড়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে ভোট দিতে অপেক্ষায় থাকা ভোটারের লাইন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন তারা। সকালে প্রায় সব কেন্দ্রেই পুরুষের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। এদিকে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামও বলেছেন, ‘ধীরে ধীরে ভোটের হার বাড়ছে।’
গাজীপুরে মেয়র পদে এবারের নির্বাচনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের (টেবিল ঘড়ি) লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডিতে গিয়ে ঠেকবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তবে, অধিকাংশ সাধারণ ভোটারই তাদের নামপ্রকাশে অনিচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
ইসি ঘোষিত প্রায় ৭৩ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। শেষ হতে বাকি আছে আর দেড় ঘণ্টা। ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে।
দুপুর পর্যন্ত আরিচপুরের বউ বাজার রোডে অবস্থিত টঙ্গী দারুস সালাম মাদরাসা , কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টঙ্গী পূর্ব থানার পাশে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসাপাতাল কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সেখানে সকালে ভোটারের উপস্থিত কম ছিল। যদিও অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় ভোটগ্রহণের শুরু দিকে টঙ্গী দারুস সালাম মাদরাসা কেন্দ্রে কিছুটা বেশি দেখা যায় ভোটারদের।
সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে টঙ্গীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের দারুস সালাম মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, ‘নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জনগণ নিজেই জয়ী হবে।’ তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে। ভোটারদের উপস্থিতি দেখার মতো রয়েছে। সকাল থেকেই গাজীপুরবাসী ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গাজীপুরবাসীর গত ১০ বছরের হতাশা দূর হবে। এজন্য তারা এক বুক আসা নিয়ে সকাল থেকে কেন্দ্রে আসছেন এবং সবাই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।’
গাজীপুরে সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়রের জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন। আপতত তিনি ভোটের মাঠে কোনো সমস্যা দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে, ইভিএমে ধীরগতিতে ভোট হচ্ছে জানিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সকাল ১০টার পর কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছেলে জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেওয়ার পর একথা জানান জায়েদা খাতুন। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট নিয়ে এখন পর্যন্ত আমার কোনো অভিযোগ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, এতে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
এদিকে, ভোটে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। তার দাবি, ধীরে ধীরে ভোটের হার বাড়ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় জি কে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরিদুল ইসলাম এ কথা বলেন।
শুরু থেকেই অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিচ্ছে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে। কোথাও কোনো আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার ঘটনা পরিলক্ষিত হয়নি। কেউ অভিযোগ করেনি। ভোটাররা নির্বিঘ্নে এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছে তার পছন্দের প্রার্থীকে।’
ইভিএমে ভোট দিলে প্রায় দুই মিনিট পর্যন্ত প্রতীক ভেসে থাকছে— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ তথ্যটা আমার কাছে জানা নেই। যদি কোথাও কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়, আমাদের কারিগরি টিম আছে।’
এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অনিয়ম বা শাস্তির ঘটনা ঘটেনি বলে জানান এই রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি মাঠে ঘুরছি। অফিসে গেলে জানাতে পারব, কত পার্সেন্ট ভোট পড়ছে। সকালের দিকে পার্সেন্টেজ কম ছিল। ধীরে ধীরে বাড়ছে।’
গাজীপুরে ইভিএম একটি নতুন পদ্ধতি জানিয়ে ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রযুক্তির পরিচয় করাতে গেলে প্রথমে একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। আমরা ভোটার এডুকেশন যথেষ্ট করেছি। বুথে বুথে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে, কীভাবে ভোট দেওয়া হয়।’
ভোটারের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে সব কয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট দেবেন ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার। এদের মধ্যে আছে পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ ও পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।