রাসিক নির্বাচন : সম্পদে এগিয়ে লিটন, নগদ টাকায় মুরশিদ
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন (রাসিক) আগামী ২১ জুন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন যাচাই থেকে শুরু করে প্রতীক বরাদ্দ শেষ হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণাও চালাচ্ছে প্রার্থীরা। রাসিক নির্বাচনে এবার মেয়র পদের জন্য লড়ছেন চার প্রার্থী। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন, জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম।
মেয়র পদে চার প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন খায়রুজ্জামান লিটন আর নগদ অর্থে এগিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম। নগদ টাকা থেকে শুরু করে ব্যাংকে জমা অর্থে সবার পেছনে জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। মেয়র প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বিএ অনার্স ও এলএলবি পাস। হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী ও রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তার বার্ষিক আয় দুই কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে, আইন পেশা থেকে কোনো আয় নেই তার। ১৯৯৬ সালের দুটি মামলা থাকলেও রাষ্ট্র কর্তৃক সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা চলমান নেই।
হলফনামার তথ্যমতে, বছরে কৃষি খাত থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় লিটনের। এ ছাড়া বছরে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়া বাবদ আয় ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মৎস্য চাষ বাবদ আয় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা থেকে আয় ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটনের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ চার কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকা। তার হাতে রয়েছে নগদ সাত লাখ দুই হাজার ২৩৭ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা, ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২৫ লাখ টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী, সাত লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং ছয় লাখ টাকা দামের একটি শটগান ও একটি পিস্তল।
হলফনামায় লিটনের স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীর বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। নগদ অর্থ ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭০ টাকা, ১০ লাখ টাকার শেয়ার, ৯ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার, আড়াই লাখ টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী, দুই লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে লিটনের রয়েছে চার দশমিক ৬৩ একর কৃষি জমি, নগরীর উপশহরে একটি তিনতলা বাড়ি, ঢাকার বনানীতে পাঁচ কাঠার বিনিময়ে আড়াইটা অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকার মাছের খামার। আর তার স্ত্রীর নামে রয়েছে এক দশমিক ৭৭ একর কৃষি জমি, নগরীর উপশহরে একটি দুতলা পুরাতন বাড়ি এবং ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মাছের খামার। অন্যদিকে, গাড়ি কিনতে গিয়ে পূবালী ব্যাংকে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা ঋণ নিয়েছেন লিটন।
সাইফুল ইসলাম স্বপন
হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ‘স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। পেশায় তিনি সিজনাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কারী। সেই ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় হয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার হাতে আছে নগদ তিন লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩০ হাজার টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। সাড়ে চার বিঘা কৃষি জমি ও ১২ শতক অকৃষি জমি থাকলেও ঋণ নেই স্বপনের।
মুরশিদ আলম
রাসিক নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থ রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুরশিদ আলমের। তার হাতে ১২ লাখ টাকা রয়েছে হলফনামায় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে একটি মোটরসাইকেল, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ফ্রিজ, ফ্যান, ল্যাপটপ এবং আসবাবপত্র হিসেবে খাট, শোকেশ ও আলমারি রয়েছে।
তবে, কোনো স্থাবর সম্পত্তি বা ঋণ নেই এই মেয়রপ্রার্থীর। বর্তমান বা আগে কোনো মামলা দায়ের হয়নি মুরশিদের বিরুদ্ধে। কামিল পাস এই প্রার্থীর পেশা হিসেবে বলা হয়েছে টিউশনি ও ধর্মীয় আলোচক। তার বার্ষিক আয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও আয়ের খাত সুনির্দিষ্টভাবে হলফনামায় উল্লেখ নেই।
এ কে এম আনোয়ার
জাকের পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী একেএম আনোয়ার হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলএম পাস। পেশায় আইনজীবী, আর সেখান থেকেই তার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা। তবে, কোনো স্থাবর সম্পত্তি বা ঋণ নেই এই প্রার্থীর। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হাতে রয়েছে এক লাখ টাকা। আর ব্যাংকে আছে মাত্র দুই হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী ও ২০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। তার বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই।