কুমিল্লা-ময়মনসিংহ সিটির ফলাফলের অপেক্ষা
বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। কে হচ্ছেন বিজয়ী সেই ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন প্রার্থীরা। দুটি নির্বাচনে আজ শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে সাধারণ নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। এখন ভোটগণনা চলছে।
ময়মনসিংহে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হলেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে বাস প্রতীকের মেয়র প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা ও ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সারের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় সুমন নামে এক ছাত্রলীগ নেতা কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করলে তুহিন হোসেন এবং জহির আহমেদ নামে ঘোড়া প্রতীকের দুই সমর্থকের পায়ে গুলি লাগে। পরে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গুলিবিদ্ধ দুইজনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অন্য সমর্থকরা।
এ ছাড়া কুমিল্লা নগরীর হোচ্ছাম হায়দার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগসহ ভোটের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
সাক্কু বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের দুইবার মেয়র ছিলাম। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বাস প্রতীকের সমর্থকেরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দিচ্ছে না। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকেই পথে পথে পাহারা বসানো হয়েছে যেন আমার ভোটাররা কেন্দ্রে না আসতে পারে। নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনটা ওয়ার্ডে আমার কোনো এজেন্টকে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। ভোটের পরিবেশ একদম ভালো নয়। আশা করছি নির্বাচন কমিশন যদি উদ্যোগ নেয়, ভোটাররা যদি কেন্দ্রে আসতে পারে, আমি জয়ী হব।
কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার ১০৫টি কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন, নারী ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৮ জন ও দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের।
এই উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা (বাস প্রতীক), বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (ঘড়ি প্রতীক) ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া প্রতীক)।
অপরদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন (মসিক) নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ধীরগতিতে চলেছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ।
ইভিএম মেশিনে বেশ কয়েকজন নারীকে আঙুলের ছাপ ঠিকমতো না ওঠায় ভোট দেওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র এনে তাদের ভোট দিতে বলা হয়। এছাড়া বয়স্ক পুরুষদের ইভিএম নিয়ে ধারণা না থাকায় ভোট দিয়ে গিয়ে তারা বেশি সময় নিচ্ছেন। তবে ভোটগ্রহণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকে ইভিএমে ভোট দেওয়া খুবই সহজ বলেও মন্তব্য করেছেন।
ইভিএম নিয়ে ভোগান্তির কথা জানান সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু। ভোট দিতে তাকেও একাধিকবার আঙুলের ছাপ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে ভোগান্তির কথা শুনছি। অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছে না। ভোটারদের যেন বারবার ঘুরতে না হয়। কারণ বিড়ম্বনা হলে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে না। কেউ যেন ভোট না দিয়ে ফিরে না যায়। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে অনুরোধ করব।
হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু বলেন, ইভিএমে ভোট নিয়ে ধীরগতি পুরোনো সমস্যা। এটি মেনেই ভোট চলছে। তবে অনেকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। অনেক ভোটার বলছেন, এবার ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে জাল ভোট হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই।
প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কাজল চন্দ্র দাস বলেন, নারী ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিতে একটু সমস্যা হওয়ায় সময় বেশি লাগছে। এছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ময়মনসিংহ সিটিতে ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯০টি ভোটকক্ষে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন ভোটার। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭২ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১৫ জন এবং ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।
এ সিটিতে মেয়র পদে পাঁচজন- ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন- ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (টেবিল ঘড়ি), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া), উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি), কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল)।