মোহাম্মদ আলীর ১০ অজানা তথ্য
বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী ওরফে ক্যাসিয়াস ক্লে গত শুক্রবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন, এ খবর কারো অজানা নেই। সংগ্রামী জনগণের প্রতিভূ হিসেবে সারা বিশ্বেই মোহাম্মদ আলী পরিচিত।
তাঁর কিংবদন্তিতুল্য বক্সিং ম্যাচগুলোর পাশাপাশি নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সোচ্চার থাকার জন্য সমগ্র বিশ্বই মোহাম্মদ আলীকে স্মরণ করবে বহুকাল।
কিন্তু এই কিংবদন্তির জীবনের বেশ কিছু তথ্য এখনো অনেকটা অগোচরেই রয়ে গেছে। হিস্টরি ডটকম আর জি নিউজের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেল সেসব অজানা তথ্য।
১. মোহাম্মদ আলীর বক্সিংয়ের প্রতি আগ্রহ জন্ম নেওয়ার পেছনের কাহিনীটা কিন্তু বেশ মজার। ১৯৫৪ সালে, জন্মশহর লুইভিলে ১২ বছর বয়সী আলীর পছন্দের বাইসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। আলী চুরির ঘটনাটি রিপোর্ট করেন পুলিশ কর্মকর্তা কাম বক্সিং প্রশিক্ষক জো মার্টিনের কাছে। ছোট্ট আলীকে মার্টিন উপদেশ দেন, তাঁর কাছে বক্সিং শিখতে, যাতে চোরকে সে নিজেই সাজা দিতে পারে। এর মাত্র ছয় সপ্তাহ পরেই আলী নিজের প্রথম বক্সিং ম্যাচটি জেতেন।
২. মোহাম্মদ আলীর আগের নাম, ‘ক্যাসিয়াস ক্লে’-এর পেছনের কাহিনীটিও বেশ মজাদার। তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল ঊনবিংশ শতকের বিখ্যাত এক দাসপ্রথাবিরোধী নেতার নামে। ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে নিজে শ্বেতাঙ্গ হলেও দাসপ্রথার বিলুপ্তির জন্য বেশ জোরেশোরে আন্দোলন করেছিলেন।
৩. মোহাম্মদ আলী নামটি পছন্দ করার আগেও, এই বক্সার নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলেন। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ নেতা ম্যালকম এক্সের অনুকরণে নিজের নাম রেখেছিলেন ক্যাসিয়াস এক্স। পরে ১৯৬৪ সালে মোহাম্মদ আলী নামটি গ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি বক্সার।
৪. বিমানে চড়তে ভয় পেতেন মোহাম্মদ আলী। এমনকি ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য যখন তাঁকে বিমানে চড়ার কথা বলা হয়, তিনি রাজি ছিলেন না; বরং পাল্টা প্রস্তাব রেখেছিলেন জাহাজে চেপে যাওয়ার জন্য। অবশ্য এই আপত্তি ধোপে টেকেনি।
৫. ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত আলীর আত্মজীবনী অনুসারে শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্য নির্দিষ্ট এক রেস্তোরাঁয় ঢুকতে বাধা দেওয়া হলে তিনি রাগ করে ওহাইও নদীতে নিজের অলিম্পিক মেডেলটি ছুড়ে ফেলেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি, বরং তিনি মেডেলটি হারিয়ে ফেলেছিলেন।
৬. ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করায় আলী প্রায় তিন বছর নিষিদ্ধ ছিলেন, এটা সবাই জানে। কী করেছিলেন তিনি এই সময়টাতে? অভিনয়! অদ্ভুত শোনালেও সত্যিই নিউইয়র্কের ব্রডওয়ে থিয়েটারে ‘বাক হোয়াইট’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন আলী। নাটকটি বিশেষ জনপ্রিয় না হলেও আলীর অভিনয় কিন্তু ভালোই প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
৭. মোহাম্মদ আলীকে সবাই কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই জানেন। কিন্তু মজার কথা হলো, তাঁর মায়ের দিককার একজন পূর্বপুরুষ অ্যাবে গ্রাডি এসেছিলেন আয়ারল্যান্ড থেকে ১৮৬০ সালে। কাজেই বলা যায়, কিছুটা হলেও শ্বেতাঙ্গ রক্ত আছে এই মুষ্টিযোদ্ধার শরীরে।
৮. আলী সর্বমোট চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। তাঁর সন্তানের সংখ্যা নয়। এর মধ্যে লায়লা আলী বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেও হয়েছেন খ্যাতনামা মহিলা বক্সার।
৯. ১৯৯০ সালে ইরাক যখন কুয়েত দখল করে নেয়, তখন মোট ১৫ জন মার্কিন নাগরিককে বন্দি করা হয়। সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুসলমান ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী স্বয়ং ইরাকে যান তাঁদের মুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা করতে। রাজধানী বাগদাদে ইরাকি শাসক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি সেসব বন্দিকে মুক্ত করেও এনেছিলেন তিনি।
১০. আলী কিন্তু টুকটাক জাদুও জানতেন। এর মধ্যে ছিল রুমাল অদৃশ্য করে ফেলা কিংবা মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি ওপরে শূন্যে ভেসে থাকা। অবশ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে তিনি এসব জাদুর রহস্য সব ফাঁস করে দিয়েছিলেন। বিখ্যাত জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড পর্যন্ত আলীর জাদুতে মুগ্ধ হয়েছিলেন।