ট্রায়াল ওকালতির সাত-সতেরো
ট্রায়াল ওকালতি এমন দক্ষতা, যা শেখানো যায়। শিক্ষক যোগ্য হলে, ছাত্র যথেষ্ট মননশীল হলে এবং ওকালতি সম্পর্কে ভাবনায় দিনে অন্তত দশ মিনিট সময় ব্যয়ের ইচ্ছে থাকলে বারে ওকালতি পাস করতে সক্ষম যে কেউ চমৎকার ট্রায়াল আইনজীবী হয়ে উঠতে পারেন। এটা কোনো রহস্য নয়, এটা দক্ষতা। দক্ষতা অর্জন করা যায়।
এ বইয়ে একটি প্রতিশ্রুতি আছে। এ বই হতে কিছু পড়ার জন্য যদি প্রতিদিন তিন মিনিট ব্যয় করেন, তারপর যা পড়েছেন তা নিয়ে চিন্তা করতে আরো সাত মিনিট ব্যয় করেন, তাহলে দুই মাসের মধ্যে আপনি ৮৫ শতাংশের বেশি প্রতিযোগিতায় ভালো করেবেন। যদি সত্যিকার অর্থে ওকালতিতে আকৃষ্ট হয়ে এটাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিত আপনি নিজেকে দেশের সেরা ট্রায়াল অইনজীবীদের ১০ শতাংশের মধ্যে খুঁজে পাবেন। বাকিটা সহজাত প্রতিভার বিচ্ছুরণ, আর সেটা নির্ভর করছে আপনার ওপর।
একদিনের সেমিনারে পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে লেখা সহজপাঠ্য এ বই পড়ে শেষ করা মাত্রই আপনার বুঝে ওঠার কথা, ভালো ওকালতি মূলত সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। সমস্যা হলো, আমরা আদালতে প্রবেশের সময় আমাদের সাধারণ জ্ঞানগুলো হারিয়ে ফেলি। ফলে আমরা প্রায়ই বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হই এবং বারবার একই ভুল করি। জটিলতা ও অবস্থানগত চাপের কারণে আমাদের মনোযোগ এতই হালকা হয় যে আমরা সহজ সাধারণ জ্ঞান ভুলে যাই, আইনপেশার ক্ষেত্রে যা বাধা।
এ বই ওকালতির সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত। এতে ধারাবাহিক নিয়মে সাজানো সাধারণ জ্ঞানের অধিকাংশই আপনার কাছে সোজা মনে হবে। তবে এতটা সোজা নয় যে আপনি আগে থেকেই সব জানতেন। নিয়মগুলোর ব্যবহার দেখাতে পর্যাপ্ত উদাহরণ দেওয়া হলেও অপ্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এটা আমার বা অন্য কারোর যুদ্ধ-গল্পের সংক্ষিপ্তসার নয়। মৌলিক নিয়মগুলো নিয়ে চিন্তা করতে থাকুন। আমাদের সময়ে আমরা বেশিরভাগ আইনজীবী যেসব শোচনীয় চোরা-গর্তে পড়েছিলাম, আপনারা সেগুলো এগিয়ে নিতে পারবেন।
২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘কমন সেন্স, রুলস অব অ্যাডভোকেসি ফর লইয়ারস’ ব্রিটিশ-আমেরিকান দক্ষ আইনজীবী কেইথ ইভানসের ব্যাপক সমাদৃত অনুবাদ গ্রন্থ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অধ্যয়ন করে ১৯৬৩ সালে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি। ইংল্যান্ডের ওল্ড বেইলি আদালত থেকে শুরু করে হাউস অব লর্ডস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ও ফেডারেল আদালতে ওকালতি করেছেন জগৎখ্যাত এই আইনজ্ঞ।
সমাদৃত এ বই বাংলাদেশের পাঠকদের নাগালে নিয়ে এসেছেন জ্যেষ্ঠ সহকারী বিচারক জীবরুল হাসান। বইটির প্রকাশক ইউনিভার্সেল বুক হাউস। এটি তাঁর অনূদিত দ্বিতীয় বই। বর্তমানে প্রেষণে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত বিচার বিভাগীয় এ কর্মকর্তা কেইথ ইভানসের বইটি অনুবাদ করেছেন। চলতি বছরের একুশে বইমেলায় জীবরুল হাসানের প্রথম অনূদিত বই লর্ড ডেনিংয়ের ‘হোয়াট নেক্সট ইন দ্য ল’ ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বইটি বেশ সাড়া ফেলে বোদ্ধামহলে।
কেইথ ইভানস বলেছেন, ‘এই বইয়ের একটা প্রতিশ্রুতি আছে। এই বই হতে কিছু পড়ার জন্য যদি প্রতিদিন তিন মিনিট ব্যয় করেন, তারপর যা পড়েছেন তা নিয়ে চিন্তা করতে আরো সাত মিনিট ব্যয় করেন, তাহলে দুই মাসের মধ্যে আপনি ৮৫ শতাংশের বেশি প্রতিযোগিতায় ভালো করবেন।’ বইয়ের শেষ প্রচ্ছদে চুম্বক এ কথাগুলো রয়েছে।
বইয়ের প্রাক-কথন লিখেছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম। লিখেছেন, ‘জীবরুল হাসানের বইটির অনুবাদ নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী ও দুরদর্শী পদক্ষেপ। অনূদিত বইটি আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য বহুমাত্রিক সহায়ক হবে।’
অনুবাদক জীবরুল হাসান তাঁর কথায় লিখেছেন, “আমাদের দেশে আইনজীবীদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। জেলা থেকে উচ্চ আদালত সব জায়গাতেই দক্ষ ট্রায়াল আইনজীবীর অভাব। ট্রায়াল ওকালতির কৌশল সম্পর্কিত বই বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণ আইনজীবীদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ‘কমন সেন্স, রুলস অব অ্যাডভোকেসি ফর লইয়ারস’ বইটি।”
সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ডাকযোগে তাঁকে বইটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক জেসমিন জহুরুন নেছা। হাতে পেয়েই অনুবাদে প্রয়াসী হয়েছেন জীবরুল।
জীবরুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জেনোসাইড স্টাডিজে ডিপ্লোমা করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পর ষষ্ঠ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ২০১৩ সালে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা পদে যোগ দেন।