মাতৃভাষা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কথা
মাতৃভাষা বিশেষ কোনো ব্যক্তি-মানুষের যেমন অন্যতম পরিচয়-উৎস, তেমনি তা একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বেরও শ্রেষ্ঠ স্মারক। মানুষের কাছে যেসব বিষয় তার প্রাণের মতোই প্রিয়, মাতৃভাষা তার অন্যতম। বস্তুত, মাতৃভাষাই একজন মানুষের পরিচয়ের শ্রেষ্ঠতম উৎস। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিশেষ কোনো মানুষ নিজেকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরে, তুলে ধরে তার জাতিসত্তার পরিচয়। মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে কোনো জাতিই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না, পারে না নিজের পরিচয়কে পৃথিবীতে উজ্জ্বল করে প্রকাশ করতে। যে জাতির মাতৃভাষা যত উন্নত, সে জাতি সব দিক থেকেই তত উন্নত-এমন ধারণা সর্বজনস্বীকৃত।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষা জন্ম লাভ করে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বংশের অন্তর্গত বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস বহু প্রাচীন। আজ আমরা যে ভাষায় কথা বলি, হাজার বছর আগে আমাদের ভাষা এ রকম ছিল না। বস্তুজগতের সবকিছুর মতো ভাষাও নিয়ত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রমে প্রতিষ্ঠা পায় ভাষার অভ্যন্তর শৃঙ্খলা, ভাষায় যুক্ত হয় নতুন নতুন শব্দ, ভাষা হয়ে ওঠে সহজ ও প্রাত্যহিক জীবনানুগ। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা সম্পর্কেও একথা সত্য। প্রাচীন বা মধ্যযুগে বাংলা ভাষার সঙ্গে আধুনিক যুগের বাংলা ভাষার তুলনা করলেই এ বিষয়টি আমরা সম্যক উপলব্ধি করতে পারব।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা পৃথিবীতে অনন্য ভাষার চেয়ে গর্বের এই জন্য যে, তা একটি রাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশ ছাড়া এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। আমাদের দেশই পৃথিবীর একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। এ সূত্রে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর সৈনিকদের। বস্তুত, তাঁদের অবদান ও আত্মত্যাগের ফলেই যেমন রক্ষা পেয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিসংগ্রামের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি। বস্তুত ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সরণি বেয়েই সূচিত হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদ বরকত-রফিক-সালাম-জব্বারকে বাঙালি জাতি ও বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী চিরদিন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তাঁদের সাহসী ভূমিকা ও গৌরবোজ্জ্বল আত্মত্যাগের ফলেই পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়, রক্ষা পায় বাংলা ভাষার অনন্য গৌরব।
মানুষের ভাষা ব্যবহারের সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেবে বাংলা ভাষার অবস্থান সপ্তম। আমাদের মাতৃভাষার জন্য এ এক বিশাল গৌরব। পৃথিবীতে চার সহস্রাধিক ভাষার মধ্যে সপ্তম স্থানে থাকা বাংলা ভাষা প্রকৃত অর্থেই দাবি করতে পারে গৌরবের আসন। প্রায় ২৫ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। এ সংখ্যাতত্ত্বও আমাদের মাতৃভাষায় গৌরবের অন্যতম ভিত্তি-উৎস।
বাংলা ভাষার অন্যতম গৌরব এই যে, এ ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে অনেক কবি-সাহিত্যিক পৃথিবীতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। কাহ্নপা, বড়– চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, আলাওল, ভারতচন্দ্র রায়-গুণাকার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, জসীমউদদীন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, শামসুর রাহমান প্রমুখ সাহিত্যিকের নাম আমরা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে পারি। বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা পৃথিবীতে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলা ভাষার বক্তৃতা দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বাংলা ভাষার গৌরবের পতাকাকে অনেক ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন। এভাবে বহু মনীষীর মিলিত সাধনায় পৃথিবীর বুকে বাংলা ভাষা আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় রচিত সাহিত্যসম্ভার বিশ্বসাহিত্যের অনন্য সম্পদ। অনেক দীনতার মধ্যেও সাহিত্যসম্পদের জন্য বাঙালি জাতি প্রকৃত অর্থেই গৌরব বোধ করতে পারে। বাংলা ভাষায় রচিত আদিতম সাহিত্য-নিদর্শন হচ্ছে চর্যাপদ। আনুমানিক হাজার বছর আগে চর্যাপদগুলো রচিত হয়েছে। চর্যাপদের প্রধান কবিরা হচ্ছেন-কাহ্নপা, লুইপা, শবরীপা, ভুসুকুপা প্রমুখ। চর্যাপদের পর বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যকীর্তি হচ্ছে বড় চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। এরপর মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী, রোমান্সমূলক প্রণয়কাব্য, অনুবাদ সাহিত্য বিচিত্র শাখায় বিকশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের বৈচিত্র্যের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই উপলব্ধি করা যায়, আমাদের মাতৃভাষা ভাব প্রকাশে কত শক্তিশালী! মানব অস্তিত্বের যে কোনো ভাব প্রকাশেই আমাদের মাতৃভাষা সক্ষম। আধুনিক বাংলা কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য ইত্যাদি শাখা পর্যালোচনা করলেই আমরা এ মন্তব্যের সত্যতা খুঁজে পাব।
সংগীতের ক্ষেত্রেও আমরা মাতৃভাষা বাংলার অনন্য শক্তির পরিচয় পাই। বহু গীতিকাব্য ও গীতিকার বাংলা ভাষায় সংগীত রচনা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ গীতিকারের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। এঁদের সাঙ্গিতিক কীর্তিও আমাদের মাতৃভাষার গৌরব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা ভাষা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। বায়ান্নর শহীদদের স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ লাভ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রবণতার দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের মাতৃভাষা আবার অবহেলার শিকার। আমরা অন্য ভাষা অবশ্যই শিখব, পৃথিবীতে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য ইংরেজিসহ নানা ভাষায় শিক্ষালাভ জরুরি; কিন্তু মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে তা কখনোই সম্ভব নয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, নিকট অতীত থেকে এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অফিসে-আদালতে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে-সরকারি কার্যক্রমে-সর্বত্র বাংলা ভাষা আজ বঞ্চনার শিকার। একুশের শহীদদের মতো আজ দাবি উঠেছে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।
২.
১৯৫২ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। এই দিনে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের ভাষা আন্দোলনকে পৃথিবীর মানুষের গৌরবিত উত্তরাধিকারে রূপান্তরিত করেছে। ১ মে যেমন আন্তর্জাতিক মে দিবস, যা পালিত হয় পৃথিবীর সব দেশে, ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি তেমনি পালিত হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর বাঙালি জাতির জীবনে এমন গৌরবোজ্জ্বল অর্জন আর ঘটেনি। ভাষা আন্দোলনের শহীদ রফিক-সালাম-বরকতরা এখন বিশ্ব মানুষের গৌরবিত অহংকার। পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন জাতিসত্তার মাতৃভাষা নিয়ে তৈরি হবে নতুন সচেতনতা। পৃথিবীর মানুষের সামনে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় উঠে যাবে রফিক-সালাম-বরকতরা-একুশের ভোরে বিশ্বজুড়ে ঐক্যতান উঠবে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেবল বাংলা ভাষাই নয়, গোটা বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সব ইতিহাসই এখন উঠে আসবে বিশ্ব-মানুষের সামনে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা আমাদের জাতিগত পরিচয় এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে আরো গৌরবোজ্জ্বল ও মহীয়ান করেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার ফলে পৃথিবীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষাসমূহ আত্মরক্ষা এবং আত্মবিকাশের সুযোগ পেল। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষাসমূহ বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সাহসী ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের মনে হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে পৃথিবীর সব ভাষা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষাসমূহের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। বস্তুত, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে শুধু বাংলা ভাষাই নয়, পৃথিবীর সব ভাষাকেই সম্মান করা হলো, স্বীকৃতি দেওয়া হলো। অতএব, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগ্রাম আর আন্দোলনের অন্যতম শক্তি-উৎস হিসেবেও এখন দেখা দেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি, প্রতি বছরের প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে। এভাবে মাতৃভাষা হয়ে উঠবে বিশ্ব-মানুষের সংগ্রামের নতুন অস্ত্র।
পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে মাতৃভাষা আর নিজস্ব সংস্কৃতির শক্তি জরুরি প্রয়োজন। মাতৃভাষা আর সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই কেবল ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা হয়ে উঠবে বিশেষ কোনো জাতিসত্তার নিজস্ব অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্বাধীনসত্তা রক্ষারও সংগ্রাম। ভাষা-সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খল থেকে এভাবে হয়তো পৃথিবীর মানুষ মুক্তির দিগন্ত দেখতে পাবে। তা না হলে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন ইন্টারনেটের ওয়েবসাইটের একটি বিশেষ ভাষার দাপটে পৃথিবীতে দেখা দেবে নতুন ভাষা-উপনিবেশ। সেদিক বিবেচনা করলে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে সংগ্রামের এক বিশ্ব-হাতিয়ার।
এসব ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি একটা সন্দেহও যে মনের কোণে উঁকি দেয় না, তা নয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষার সংগ্রাম যদি সাম্রাজ্যবাদী অপকৌশলে কোনো স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পরিণত হয়, তাহলে লাভবান হবে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই। কেননা, তাহলেই বিক্রি করা যাবে অস্ত্র, এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দুই পক্ষকেই করা যাবে পদানত। বর্তমান এক পরাশক্তির বিশ্বে এ ঘটনার যে সম্ভাবনা নেই, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? অতএব, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষার সংগ্রামের সময় এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন বোধ করি।
৩.
যে বাংলা ভাষার গৌরবের কথা ওপরে আমরা বললা, তার প্রকৃত অবস্থা কী? যদি আমাদের ভাষা-আন্দোলন ও মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থা জানার জন্য পৃথিবীর কোনো দেশ থেকে কোনো প্রতিনিধিদল জরিপ করতে আসে, তাহলে কী দেখতে পাবে তারা? ভয়ংকর সে-দৃশ্য কল্পনা করা যায় কি? বস্তুত, বাংলাদেশে বাংলা ভাষার অবস্থা বর্তমানে রীতিমতো করুণ, নিজ বাসভূমে সে এখন পরবাসী, তার অঙ্গে এখন বহুবিধ লজ্জার স্পর্শ। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তি একথা বলার চেষ্টা করেছে যে বাংলা সাহিত্যের ভাষা, কিন্তু কাজের ভাষা নয়, উচ্চশিক্ষার বাহন নয়-সে কথাই আজ স্বাধীন দেশে উচ্চারিত হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী থাকতে পারে? ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা ভাষার জন্য করুণ কান্না অঝোরে ঝরতে থাকে, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার শুকোতে শুরু করে, শুকোতে শুকোতে আবার কান্না আসে পরের বছরের ফেব্রুয়ারির পুণ্য তিথিতে।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করলে এ অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন ঘটবে? বাংলা ভাষা কি হয়ে উঠতে পারবে আমাদের যথার্থ মাতৃভাষা? এসব প্রশ্নের জরুরি মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। কেবল বৃথা গৌরব বোধে স্ফীত হয়ে কোনো লাভ হবে না, প্রয়োজন মাতৃভাষার যথাযথ গৌরব বৃদ্ধিতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ।
পুঁজিবাদী শোষণ আর উন্নত প্রযুক্তির নামে ভাষা-সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বায়ন নীতির বিরুদ্ধে এভাবে ভাষা-আন্দোলন তথা একুশে ফেব্রুয়ারি কিংবা বলি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের সামনে নতুন পথনির্দেশক হয়ে উঠতে পারে। দেশে দেশে বঞ্চিত মানুষ তাদের সার্বিক মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কাজে লাগাতে পারবে কি না, তারই ওপর নির্ভর করছে এই দিবসের মৌল তাৎপর্য।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়