আগে-পিছে বাদ দিয়ে গণমাধ্যম মানুষকে বিভ্রান্ত করে : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের ভূমিকাটাও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় গণমাধ্যম ঠিক তার যে অংশটুকু প্রয়োজন, ওইটুকু কেটে নিয়ে আগে ও পিছে বাদ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সবসময় না, মাঝে মাঝে এটা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।’
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন সিইসি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যমকেও আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে সার্বিক যে নির্বাচন প্রক্রিয়া বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে তিনি (মানবাধিকার চেয়ারম্যান) মন্তব্য করেছেন। আমরা তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি।’
শাসক দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি ভেঙেই চলছেন এবং সহিংসতা হচ্ছে। আচরণবিধি মানাতে কেন পারছেন না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘না, এটা আমি স্বীকার করি না। নির্বাচনি মাঠে আমরা এক্সটেনসিভ ঘুরে বেড়িয়েছি। প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেছি। তাদের কাছ থেকে খুব বেশি অভিযোগ আমরা পাইনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহিংসতা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু, মোটা দাগে খুব বেশি ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না। তবে সহিংসতা একেবারে হয়নি, সে কথা বলছি না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আশা করি এটা গ্র্যাজুয়েলি…। আর কয়েকটা দিন আছে। আমরা আমাদের আবেদন রাখছি, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা যেন এটাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। একটা সময় প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর ভোটের দিন আসবে। ভোটের দিনটা নীরবে ও আইনকানুন মেনে যদি ওটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলেই ভোটাধিকার প্রয়োগটায় আমরা জোর দিচ্ছি। সেখানে পোলিং এজেন্টরা থাকবে, কেন্দ্রের ভেতরে পোলিং এজেন্টদের ভারসাম্যটা রক্ষা করতে হবে। সেখানে কোনো আনঅথরাইজ পারসন যেন প্রবেশ করতে না পারে এবং বাহির থেকে, ভেতর থেকে গণমাধ্যম যদি কোনো অনিয়মের ছবি ক্যাপচার করে, এটা যদি সম্প্রচার করতে পারে; আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব। এভাবে একটা দৃশ্যমানতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাটা যদি ফুটে উঠে, তাহলে এর ক্রেডিবিলিটি বেড়ে যাবে এবং রং পারসেপশন হওয়ার সুযোগটা কম হবে। আমরা আশাবাদী।’
সিইসি বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচনকালীন মানবাধিকারের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোকে হাইলাইট করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন ও জানেন, ভোটাধিকার, নির্বাচিত হওয়া এবং নির্বাচিত করা, একটি ফান্ডামেন্টাল হিউম্যান রাইট, মৌলিক মানবাধিকার। তিনি আমাদেরকে সহযোগিতা করতে চান। আমরাও তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই জিনিসগুলো গ্র্যাজুয়েলি যদি আমরা তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হই, সহিংসতা বাদ দিয়ে অহিংস পদ্ধতিতেও নির্বাচন করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকা উচিত এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বা যারা নির্বাচন করবেন, তাদেরকে গ্র্যাজুয়েলি এই জিনিসগুলো অনুধাবন করে সহিংসতার পথ থেকে সরে এসে অহিংস পদ্ধতিতে সব ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগদানে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা, অনুপ্রাণিত করার যে প্রক্রিয়া তা তারাও চালাবেন, আমরাও বলেছি, আমরাও সেই সঙ্গে কাজ করব।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটাররা আসবেন, এটি ফ্রি-ফেয়ার হতে হবে। ফ্রি-ফেয়ার যদি না হয়, তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগ হবে না। ফ্রি-ফেয়ারের প্রতিবন্ধকতা যদি কোথাও সৃষ্টি করা হয়, তাহলে ভোটাধিকার এটা একটি মৌলিক মানবাধিকার, সেটা অবশ্যই বিঘ্নিত হবে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের যৌথভাবে কাজ করে যাওয়া উচিত। এটি তিনি মনে করেন, আমরাও তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি।’
সিইসি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তিনিও বিশ্বাস করেন বা লক্ষ্য করে থাকেন, পারস্পরিক আস্থাটি খুবই কম। রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা থাকা দরকার এবং যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাহলে ওটাও গ্র্যাজুয়েলি নিচের দিকে যাবে। যখন প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দলের পক্ষে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাহলে পারস্পরিক আস্থার একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে বা গড়ে ওঠা উচিত। তা না হলে আমাদের রাজনীতিতে এবং নির্বাচনি প্র্রক্রিয়ায় সহিংসতাটা কিছুটা থেকে যাবে।’