তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে সরকারের নীতিগত সহায়তা চান বেসিস সভাপতি
আগামী তিন অর্থবছরের জন্য কর অব্যাহতি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে। এ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রপ্তানিমুখী উৎপাদনশিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন দেশের সফটওয়্যার খাতের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্জনের জন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিগত সহায়তা চাই।
আজ রোববার (৯ জুন) রাজধানীর বেসিস সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বেসিস সভাপতি এসব কথা বলেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে তথ্যপ্রযুক্তি সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত জানিয়ে রাসেল টি আহমেদ বলেন, জ্ঞানভিত্তিক ক্যাশলেস অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের একটি নতুন জোয়ারও সৃষ্টি করবে।
দেশের ক্লাউড সার্ভিস এবং ওয়েব হোস্টিংয়ের ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারের ১০ শতাংশ দেশীয় উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে একে করের আওতায় আনা হলে তা দেশিয় উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে। ওয়েব হোস্টিং ও ক্লাউড সার্ভিসেসের স্থানীয় বাজার যেভাবে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে তাতে করে বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে এই দুটি খাতকে কর অব্যাহতির আওতায় অবশ্যই রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি হাইটেক পার্কের বিনিযোগকারীরা তাদের বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা হারিয়ে প্রায় সমস্ত ক্যাটাগরির মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর এক শতাংশ আমদানি শুল্কের মুখোমুখি হতে পারেন। এটি পুনর্বিবেচনা করে হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের জন্য বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখার আহ্বান তার।
এবারের বাজেটে এআই, ব্লকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সাতটি বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রাসেল বলেন, বিদেশি মুদ্রা বাঁচাতে ওয়েব হোস্টিং ও ক্লাউড সেবাকে আইটিএস সেবায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে অবকাশ মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত করার দাবি জানান তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি নিঃসন্দেহে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরিফ বলেন, এতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, নতুন উদ্ভাবন এবং নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্পে। এ ছাড়া একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।
বাজেটে ক্লাউড সার্ভিস, আইটি প্রোসেস আউ ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং এনটিটিএন সেবার কর অব্যাহতির বিষয়গুলো তুলে নেওয়ায় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে। অন্যদিকে মোবাইলের সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবায় সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবার ব্যয় বাড়বে। মোবাইল ইন্টারনেট এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জন করা সম্ভব নয়।
ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য ২০২৪-২৫ সংশোধিত বাজেটে আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সকল সেবাকে আইটিইএসের অন্তর্ভুক্তি করার জন্য ওপরে জোর দাবি জানিয়ে আইএসপিবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর ১০ শতাংশ এআইটি ও সিএনইউ, সিএলটির উপর বর্তমানে ৩৭ শতাংশ আরোপিত ভ্যাট ও শুল্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত সকল সামগ্রীর উপর শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি রাখছি। সংবাদ সম্মেলনে ওয়েব হোস্টিং, ক্লাউডে চাপ পড়লে তা ই-কমার্সের ওপর প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে আম্বারিন রেজা বলেন, ক্যাশলেস হতে সরকার পেমেন্টের ক্ষত্রে প্রণোদনা দেওয়া, ই-ইলার্নিং এ কর অব্যাহতি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির উদ্যোক্তাদের টিডিএস উঠিয়ে নেওয়ার দাবি করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটে ক্যাশলেস পেমেন্টকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হলেও পেমেন্ট গ্রহণে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর পেমেন্ট চার্জ প্রদান করতে হয় জানিয়ে আম্বারিন রেজা বলেন, ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করতে এই সেক্টরে পেমেন্ট চার্জ সম মানের ন্যূনতম দুই শতাংশ ক্যাশ ইন্সেটিভ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়াও শিক্ষা ও চিকিৎসাখাতে ক্যাশলেস পদক্ষেপের ওপর বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।