সারাদেশে নিহত ছয়, বিজিবি মোতায়েন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকাল বুধবার (১৭ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগামীকাল বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সব বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করেছে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
রাজধানীতে আজ মঙ্গলবার রাতে তোপখানা সড়কে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে, প্রাথমিকভাবে আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সীমা লঙ্ঘন করছেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে ন্যূনতম বক্তৃতা বিবৃতি, কোনো বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা হলে ছাত্রলীগ শেষ দেখে ছাড়বে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের ওপর হামলাকারী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারদের রুখে দিতে ছাত্রলীগ বদ্ধ পরিকর।’
কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দেশে বর্তমান অবস্থাকে ভয়াবহ অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই, এমনকি কথা বলার কোনো অধিকার নেই। এখন কঠিন সময় আমরা অতিক্রম করছি। এই সময়ে যদি আমরা রুখে দাঁড়াতে না পারি তাহলে পুরো দেশ ও জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
পবিত্র আশুরার কারণে আগামীকাল বুধবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি থাকছে না। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি চত্বরে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।