বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ তবুও গেইনারের সেরা ইফাদ অটোস
গত সপ্তাহে (২০ থেকে ২৪ অক্টোবর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ইফাদ অটোসের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এতে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ১৪০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে গত বৃহস্পতিবার আন-অডিটেড সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ৪০৯ পয়েন্টে। যা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ২৭ টাকা ৩০ পয়সা। যা আগের সপ্তাহে ১৭ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ২২ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে পাঁচ টাকা ৩০ পয়সা বা ২৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সপ্তাহটিতে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ১৪০ কোটি ৭৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার আন-অডিটেড পিই রেশিও দাঁড়ায় ৪০৯ দশমিক ৫০ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে নেই।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে, ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। মানে পিই ও রেশি ৪০ ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যতো বাড়বে ঝুঁকিমাত্রা ততো বাড়তে থাকবে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ইফাদ অটোসের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে গত ১৭ অক্টোবর। সেই হিসেবে, কোম্পানিটির সভা আজ শনিবার দুপুর ২টায় শুরু হবে। কোম্পানি সভায় গত ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরের (জুলাই-জুন) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। সভায় প্রতিবেদন অনুমোদন শেষে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা আসতে পারে।
গত অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে ইফাদ অটোসের শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে দুই পয়সা। আগের অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ৩৫ পয়সা। গেল অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস বা তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে পাঁচ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল নেগেটিভ ৩০ পয়সা। আলোচিত তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে এক টাকা ২৬ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৬ টাকা ৯৬ পয়সা।
এর আগে ২০২২-২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরে আর্থিক প্রতিবেদন (জুলাই-জুন) যাচাই-বাছাই করে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ লভ্যাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৫৮ পয়সা। শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ দুই টাকা ৭৬ পয়সা। আর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ৩৭ টাকা ৯১ পয়সা।
২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইফাদ অটোস। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩২টি। রিজার্ভে রয়েছে ৬৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, বিদেশি দশমিক শূন্য দুই শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদি ঋণ দাঁড়ায় ৮১ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ টাকা।