মূসক আইন নিয়ে আপত্তি এফবিসিসিআইয়ের
আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি এ আপত্তি জানান।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভ্যাট আইন নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে আলোচনায় যেসব প্রস্তাব নিয়ে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করেছিল, সেগুলোর কোনোটিই ভ্যাট আইনে প্রতিফলিত হয়নি।’
কর আদায়ের হার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত এসআরও (স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডারস) নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি।
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনের জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে দাবি করে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের গঠিত সমন্বয় কমিটি সাতটি বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু এখন সরকার ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো না মেনে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আর এটি বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট ও জিএসপি সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে। যদি ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকে তাহলে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে।’
নতুন আইনে মূল্য সংযোজন করের (মূসক বা ভ্যাট) হার ১৫ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে এফবিসিসিআই প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া অন্য প্রস্তাবগুলো হলো— সরবরাহের (উৎপাদন, ব্যবসা ও সেবা দেওয়া) ক্ষেত্রে ৩৬ লাখ টাকা লেনদেন পর্যন্ত কর অব্যাহতি, বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত কেবল উৎপাদন পর্যায়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত করারোপ, এ খাতের করদাতার জন্য কেনা উপকরণের বিপরীতে কর রেয়াত, বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্বিশেষে ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ, উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণে অসমর্থ প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কম হারে মূসক আরোপ এবং নতুন আইনের ধারা ২(৯৭)-এর দফা (ক)-এর আওতায় আত্মীয়স্বজনকে করদাতার খেলাপি কর আদায়ের জন্য দায়ী না করা।
তাই নতুন মূসক আইন বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো সংযোজনের আহ্বান জানিয়েছেন মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার আরেকটি আবেদন হলো বাজেট অনুমোদনের আগে যেন কোনো এসআরও জারি করা না হয়।
সভায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত হলো কোম্পানির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আর যেসব কোম্পানি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরিচালনা করে তারা গ্রাহকদের উন্নতমানের সেবা দিয়ে থাকে।
বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সহযোগী হিসেবে এ দেশকে একটি অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়।
দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আইবিএফবির সভাপতি ও রানার্স গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। আইবিএফবির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সহসভাপতি হুমায়ন রশিদসহ প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।