পরিবেশদূষণ রোধে শিল্পপতিদের বেশি কর দিতে আহ্বান অর্থমন্ত্রীর
পরিবেশদূষণ রোধে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের আরো বেশি কর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গতকাল রোববার রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রোপলিটন চেম্বার মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের জন্য সবুজ শিল্পনীতি : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।
এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস-উদ-দৌলা, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের আবাসিক প্রতিনিধি হাসান মজুমদার, এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ, বে ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান, রহিমআফরোজ রিনিউঅ্যাবল এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনওয়ার মেজবাহ মঈন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সেমিনারে সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ড. ফাহমিদা খাতুন ‘সবুজ শিল্পনীতি : আঞ্চলিক পর্যায়ে সর্বোত্তম ব্যবহার ও বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন কৌশল’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম আবু ইউসুফ ‘তৈরি পোশাকশিল্প খাত সবুজায়নের ওপর কেস স্টাডি : বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জন্য বিশ্লেষণ’ বিষয়ক পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা আরো বেশি কর দেবেন, যাতে এ অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে সরকার পরিবেশদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। কেননা, বর্তমান রাজস্ব আয় দিয়ে সবুজ শিল্পায়নের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।’
পরিবেশদূষণ রোধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ কারখানার মালিকদের নেওয়ার কথা বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেসব কারখানায় মালিকরা এসব সেবা নিশ্চিত করতে পারেননি, সেখানে সরকার সবুজ শিল্পায়নের স্বার্থে এমন সেবা সরবরাহ করতে পারে। কিন্তু এর জন্য দরকার বাড়তি রাজস্ব আয়। কারখানার মালিক ধনী ব্যবসায়ীরা বাড়তি কর দিয়ে সরকারকে এই অতিরিক্ত অর্থের জোগান দিতে পারেন। আর একটি বিকল্প হতে পারে ভর্তুকি মূল্য (সাবসিডাইজড রেট) কোথাও থেকে অর্থায়ন পাওয়া। ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদহারে কোথাও থেকে ঋণ পেলে, সরকার সেই অর্থ দিয়ে ইটিপি স্থাপনসহ পরিবেশবান্ধব শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে। কোনো কারখানার মালিক একা না করে, ৩০/৪০ জন মিলে একটি ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন করতে পারেন। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ অনেক কমে আসবে। আমাদের জমির স্বল্পতা রয়েছে। এ জন্য সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করছে। এখানে কারখানা স্থাপন করলে ইটিপিসহ সবুজ শিল্পায়নের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, ‘বাংলাদেশে যে হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে, তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত হবো। পৃথিবীর সব দেশেই মোট জনসংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশ তাদের জীবন ব্যয়ের জন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৪ সাল নাগাদ আমাদের দারিদ্র্যের সংখ্যা ১০/১২ শতাংশে নেমে আসবে। সে হিসেবে ওই বছর আমরা দারিদ্র্যমুক্ত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করব।’
অনুষ্ঠানে শিল্পসচিব মোশাররাফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সভায় যে শিল্পনীতি পাস হয়েছে, তাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য সবুজ শিল্পায়ন অগ্রাধিকার পাবে। সরকার সবুজ শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় নানা ধরনের ইনসেনটিভ সহায়তা দেবে। সবুজ শিল্পায়নের স্বার্থে সাভারে চামড়া কারখানা স্থানান্তর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
সবুজ কারখানা তৈরিতে ব্যয় বেশি বলে ঋণের সুদহার কমানোর দাবি করেন অন্য বক্তারা।