ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক কমলেও কার্যকর হয়নি
মুঠোফোনের সিম দিয়ে ইন্টারনেট সেবার ওপর সরকার সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ৩ শতাংশ করলেও তা কার্যকর করেনি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
অথচ গত ৪ জুন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ইন্টারনেট সেবায় ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রস্তাব করার পর ওই দিন রাত থেকে মুঠোফোন কোম্পানিগুলো তা কার্যকর করে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে।
সরকার মুঠোফোন সেবার ওপর আগে থেকেই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায় করছে। নতুন করে মুঠোফোন সেবার ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপ করে গত ৪ জুন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অনেক মোবাইল গ্রাহক অভিযোগ করেন, বাজেটে প্রস্তাব করার পর থেকে মুঠোফোন কোম্পানিগুলো তাঁদের কাছ থেকে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কাটা শুরু করেছে। এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও এসএমএসের মাধ্যমে দেশের মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এর সত্যতা নিশ্চিত করে। বিজ্ঞাপনে জানানো হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা ও সরকারি আদেশনামা অনুসারে মোবাইল ফোন সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্প আরোপ করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুন, ২০১৫ থেকে সব মোবাইল সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং তার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কলরেটসহ সব মোবাইল ফোন সেবার ওপর চার্জের সঙ্গে প্রযোজ্য হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করা আওয়ামী লীগ সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানাতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার জাতীয় সংসদে মুঠোফোনের সিম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারে আরোপ করা ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই অর্থবিল ২০১৫ পাস হয়।
সম্পূরক শুল্ক কমানোর পর অনেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জানতে চাচ্ছেন, এত দিন ধরে দুই শতাংশ বেশি শুল্ক আদায়ের কী হবে। আর সম্পূরক শুল্ক কমানো হলেও তা কার্যকর হবে কবে।
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশনস ও করপোরেট রেসপন্সিবিলিটি) ইকরাম কবীর বলেন, ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক কমার কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ৪ জুন সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরও নতুনভাবে সম্পূরক শুল্ক যোগ করতে গিয়ে প্রায় ১৮ হাজার স্থানে পরিবর্তন আনতে হয়। এ ক্ষেত্রে দুই তিন দিন টানা কাজ করেন রবির কর্মীরা। আবার পরিবর্তনে কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
প্রায় এক মাস ধরে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায়ের ব্যাপারে ইকরাম কবীর বলেন, পুরো অর্থই সরকারকে দেওয়া হবে।
এদিকে আরেক মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের ১১১ নম্বরে ফোন করলে কাস্টমার কেয়ারের প্রতিনিধি সাদি জানান, সরকারের নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা আগের মতোই ইন্টারনেট সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পর ৫ শতাংশ করে সম্পূরক শুল্ক ধার্য করছেন। সম্পূরক শুল্ক কমানো সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী কর ধার্য করবেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৪৭ লাখ। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার কোটি ৪২ লাখ।
রবির ব্যবস্থাপক (রেগুলেশন) মো. দিদারুল আলম দাবি করেন, ‘শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক কমানোয় এটি আদায়ের ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরদের সমস্যায় পড়তে হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোন রিচার্জ কার্ড বিক্রির ওপর সরকারকে কর দেওয়া হয়। কিন্তু কল, এসএমএসসহ অন্যান্য সেবা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সম্পূরক শুল্কের হার আলাদা হওয়ায় এখন গ্রাহকের ব্যবহারের ওপর ভিত্তি কর দিতে হবে। শুল্ক বিভাগের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানে আসতে হবে।’