‘বাপদাদার জীবনেও পেঁয়াজের এত দাম হুনি নাই’
‘ভাই, আমার বাপদাদার জীবনেও পেঁয়াজের এত দাম হুনি (শুনি) নাই। এটা কী ধরনের কথা। ৩০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা দরে। এটা মগের মুল্লুক? দেশে কি কেউ নাই, এগুলো দেখার?’
এভাবেই নিজেরে ক্ষোভের কথা জানাচ্ছিলেন ক্রেতা মুখলেছ। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন তিনি।
এক কেজি পেঁয়াজ কিনে পলিথিনটির দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন মুখলেছ। কত টাকায় কিনলেন? প্রশ্ন করতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘এগুলা আমগোরে জিজ্ঞান ক্যান। যাগরে (যাদেরকে) জিজ্ঞাইলে কাম অইবো তাগরে জিজ্ঞান। আট কেজি পেঁয়াজের দামে কিনলাম এক কেজি। আর কিছু জিগাইবেন?’
আজ রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে পেঁয়াজের দাম, বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানের মুখে দোকান ছেড়ে পালিয়েছেন অনেক বিক্রেতা। অতিরিক্ত মুনাফা করার অপরাধে জরিমানাও করা হয়েছে অনেককে। তবে এসব অভিযানে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন ভোক্তা ও বিক্রেতারা।
পেঁয়াজের দামের পাগলা ঘোড়ার দৌড়ে চোখ কপালে উঠেছে ভোক্তাদের। এক রাতের ব্যবধানে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। লাগামহীন এ দাম, ঘাম ঝরানো উপার্জনের সঙ্গে নিষ্ঠুর উপহাস বলেই মনে করেন ভোক্তারা। বলছেন, তাঁরা এখন এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী।
মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারে যখন ভোক্তা ও ক্রেতাদের এমন প্রতিক্রিয়া তখন বেসামাল বাজার সামাল দিতে যৌথ অভিযানে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে এ সময় অনেক বিক্রেতা দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান। আর যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরকে গুনতে হয় জরিমানা।
তবে এসব অভিযানে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে, তাতে আস্থা রাখতে পারছেন না কেউই। তাঁদের দাবি, গোড়াতেই গলদ রেখে খুচরা বাজারে অভিযান ফলপ্রসূ হবে না। তাঁরা বলেন, যেসব অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এমন পরিস্থিতি হয়, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ভারত ওই সকালে এ সিদ্ধান্ত নিলেও বিকেল বেলায় বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এক লাফে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।