সুসময়ের পুরাতন দিন
এনটিভিতে আমার শুরুটা ২০০৬ সালের ১০ জুন। তার দুদিন আগে যথারীতি সাক্ষাৎকারপর্ব। যোগদানের প্রথম দিনে অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম ভাই বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় অনুষ্ঠান বিভাগে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পারভেজ চৌধুরী, আলফ্রেড খোকন, তানভীর খান, দীপু মাহমুদ, স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, নাজমুল হুদা শাপলা, সাইফ ভাই, রফিক সংক্ষেপ, রাহাত আলম, নুরুজ্জামান, মামুনুর রশীদ; তার কিছু পরে ওয়াহিদুল ইসলাম শুভ্র। পরবর্তী সময়ে মৃণাল দত্ত, জুনায়েদ বিন জিয়া, কাজী মোস্তফা, ফয়েজ রেজা, হাসান ভাই যোগ দিলেন। তখন এনটিভিতে মো. মোজাক্কের, মাকসুদ জামিল মিন্টু সর্বোপরি মোস্তফা কামাল সৈয়দের মতো মহীরুহদের এমন এক বলয় তৈরি করা ছিল যে আমরা পুরো টিম মিলে একাত্মা হতে পেরেছিলাম।
সমসাময়িক অন্যান্য টিভি স্টেশনের চেয়ে কম সংখ্যক লোকবল নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করে আরও বেশি সংখ্যক অনুষ্ঠান নির্মাণ করার নেশার মধ্যে ডুবে গেলাম। মাথার ওপর বিশাল ছাতা মোস্তফা কামাল সৈয়দ। চিঠির ভাষা থেকে অনুষ্ঠানে কারিগরি লোকবল অ্যাসাইন—সবকিছুই উনি আমায় হাতেকলমে শিখিয়েছিলেন। আমার কাজ ছিল কামাল ভাইয়ের ভাষায় ‘আর্টিস্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। উনি টেলিভিশনে কর্মরত সবাইকে শিল্পী ভাবতেন। আমি কতটুকু নিতে পেরেছিলাম তা নিশ্চয়ই অন্যেরা ভালো বলতে পারবেন।
অনুষ্ঠান বিভাগে নিরবচ্ছিন্নভাবে দুজন ক্যামেরাম্যান আর একজন সহকারী, তিনটি সনি ৩৯০ ডিভি ক্যামেরা। এডিটিংয়ে ইনসাইট প্যানেল তিনটি, প্রেজেন্টেশন, কম্পাইল আর দুটি গাড়ি। ছিলেন প্রাণপ্রিয় জুয়েল ভাই, স্বপন ভাই। অনুষ্ঠান সহকারী ছিল অলি, রাব্বী, মিঠু; যাদের কথা না বললেই নয়। রূপসজ্জা, সম্পাদনা, শব্দ নিয়ন্ত্রণ, আলোকসম্পাত, অনলাইন, সম্প্রচার বিভাগ তো ছিলই। অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল—কিছু কথা কিছু গান, ভালোবাসো মোর গান, কে তাহারে চিনতে পারে, উনিশ কুড়ি, তোমাদের পেল বাংলাদেশ, আমারও গাইতে ইচ্ছে হলো, সম্পর্ক, বিভ্রাট, শুভ সন্ধ্যা, আজকের সকাল, এনটিভি সাময়িকী, জানার আছে বলার আছে, মেধাবী বাঙালির গল্প ইত্যাদি। এ ছাড়া বিষয় আর দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান তো ছিলই। এ টিমের অবয়ব ক্রমে বড় হতে থাকে। যদিও ক্লোজআপ, মেরিল রিভাইভ ইজিদের বিজি শো কিংবা মার্কস অলরাউন্ডারের মতো বড় শোগুলোতে নিউজ টিমের সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। আমাদের তর্ক চলত শুধু একটি অনুষ্ঠানকে আরও ভালো করার জন্য। অন্য সব বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক ছিল অসাধারণ। এ রকম টিম স্পিরিট আমি পরবর্তী সময়ে আর পাইনি। ছেড়ে আসার সময়টিতে তাই চোখ গড়িয়ে কান্না লুকাতে হয়েছিল।
কিছু অপূর্ণতা তো জীবনভরই থেকে যায়। তার পরেও আজও এনটিভি আমার কাছে স্মৃতি-ঝলমল সুসময়ের পুরাতন দিন।
লেখক : মিডিয়াকর্মী ও মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা