আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ ও কূটনৈতিক সংকট

Looks like you've blocked notifications!

জাতিসংঘ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ তুমুল আকার নিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো হলেও সম্প্রতি সেটি বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

আজারবাইজানের অভিযোগ, বেআইনিভাবে ওই অঞ্চলের দখল রেখেছে আর্মেনিয়া। আর্মেনিয়ার বক্তব্য, নাগর্নো-কারাবাখ মুক্তাঞ্চল। বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই দখলে রয়েছে এলাকা। ২০১৬ সালে একই বিষয়ে কার্যত যুদ্ধ শুরু হয়েছিল দুটি দেশের মধ্যে। তবে সম্প্রতি যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, তা অতীতের সব সংঘাতকে ছাপিয়ে গেছে। বিতর্কিত ভূখণ্ডটির বাসিন্দাদের প্রায় সবাই আর্মেনীয়। এটির নিয়ন্ত্রণও করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এই অঞ্চল আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত। যদিও আজারবাইজানের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এই অঞ্চলের ওপর। এখানে রয়েছে একটি স্বাধীন সরকার। তাদের রয়েছে আলাদা সেনাবাহিনী।

দুই দেশই সীমান্তে নিজেদের সামরিক শক্তি সর্বোচ্চ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই যুদ্ধের পেছনে হাত রয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার। সিরিয়া বহু যোদ্ধাকে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সীমান্তে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। আর্মেনিয়াকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে তুরস্ক। এমনকি এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে তুরস্ককে। তুরস্ক অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তুরস্কের কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবেই আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যমও আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে, যেকোনো সময় তুরস্ক সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে।

বিশেষ করে আর্মেনিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি আর আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ফ্রান্স। দেশটি জানিয়েছে, ককেশাস অঞ্চলের দেশ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তারা। এদিকে, তুরস্ককে নিয়ে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়াও। রাশিয়া তার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশ, রাশিয়া, চীন সবাই আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ দুই পক্ষকে নানাভাবে থামানোর চেষ্টা চালালেও এখনো তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না।

বিশেষ করে চলমান এ যুদ্ধের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে উভয় পক্ষ। আর এই দোষারোপের মাত্রাও ভয়াবহ। এ অবস্থায় বিশ্বনেতারা তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও তাদের কর্ণপাত না করার বিষয়টি কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক শান্তি ও শৃঙ্খলার অনুকূল পরিস্থিতি নয়। আর্মেনিয়া গতকালও দাবি করেছে, আজারবাইজান দীর্ঘদিন ধরে এই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা চেয়েছিল যুদ্ধ হোক। আজারবাইজান কয়েক বছর ধরে বিপুল যুদ্ধ-সরঞ্জাম কিনেছে। ড্রোনের সাহায্যে সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতিও তারা আগেই নিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার যুদ্ধে রাশিয়া ও তুরস্কের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো যেভাবে ক্রমেই জড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, তাতে পরিস্থিতি যেকোনো সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব অটুট রাখতে দ্রুত চলমান এই উত্তেজনা প্রশমিত করার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়