এনটিভিতে ছিলাম, আছি, থাকব

Looks like you've blocked notifications!

এনটিভির সম্প্রচার শুরু হওয়ার আগে আমি আবেদন করেছিলাম। এরপর শুভলগ্ন থেকে এনটিভির সাথে আমার পথ চলা। যা-ই হোক আবেদন করার পর বেশ কিছু দিন চলে গেল। এরপর ঢাকার অফিসে গেলাম। ভোলা থেকে গিয়েছি বলার পর ভেতর থেকে ডাক এলো। সোফায় বসে আছি। এমন সময় একজন ভদ্রলোক এলেন (ফাহিম আহমেদ), তৎকালীন  ন্যাশনাল ডেস্কের  ইনচার্জ। জানতে চাইলেন, ভোলা থেকে কে এসেছে? দাঁড়াতেই বলে উঠলেন, বসেন। কোথায় কাজ করেছেন বলে শুরু হলো কথা। কোন পত্রিকা আর চ্যানেলে কাজ করেছি জানতে চাইলেন। সব বিষয় শুনলেন। স্বল্পভাষী মানুষটি স্পষ্ট কথা বলেন। বললাম, তদবির নেই আমার আর তদবিরে বাদ দেওয়া হলে আগেই বলে দিন চলে যাই। মাঝপথে ছেড়ে দেবেন, তা হবে না। কাজ না পারলে বাদ দিয়ে দেবেন।

দারুণ স্মার্ট ফাহিম আহমেদ দাঁড়িয়ে বলেন, যান কাজ করেন। শুরু হলো পথ চলা।

ফিরে এলাম ভোলায়। পরিকল্পনা শুরু করেই কাজে। বড় ক্যামেরা আর বড় বড় ক্যাসেট। খরচ অনেক, কীভাবে কাজ করব এত খরচ দিয়ে। আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতেই সাহস দিলেন এগিয়ে যাও। তখন ভিডিওর দোকানে কাজ করে খোকনসহ বেশ কয়েক জনকে সাথে নিয়ে ভিডিও করা আর তা কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা বেশি জরুরি হলে লঞ্চে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেই বড় ক্যাসেট (ভিএইচএস) অফিসে পৌঁছানো শুরু হলো। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় ক্যামেরা ভাড়া আর ক্যাসেট কিনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। শেষ পর্যন্ত একটি ক্যাসেট কিনে আর বেশ কয়েকটি খালি ক্যাসেট কিনে একাধিক ক্যাসেট তৈরির কাজ শুরু করলাম। কিছুটা হলেও খরচ কমে এসেছে। আধাবেলা ক্যামেরা ভাড়া পাঁচশ-এক হাজার টাকায় নামিয়ে আনলাম আর ক্যামেরাম্যানকে কিছু দেওয়া। এভাবেই চলছে এনটিভির সাথে আমার যাত্রা।

নিউজ লিখে ক্যাসেটের সাথে রাবার দিয়ে পেঁচিয়ে পাঠিয়ে দিতাম। তখন টিভি সাংবাদিকতা আর প্যাকেজ তৈরির কৌশল শিখিয়েছেন ফাহিম আহমেদ এবং আনিসুর রহমান। আনিস ভাই প্যাকেজ লেখার একটা স্ক্রিপ্ট আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, এটা দেখে এভাবে লিখে পাঠাবেন। টিভি সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় টিকতে হবে। কী করব। ভাবতে পারছি না। বরিশাল বিভাগে প্রথম আমিই নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড হাতে পেয়ে গেলাম। চ্যালেঞ্জটা যেন একটু বেশিই বেড়ে গেল আমার। উৎসাহটা আরও বেশি। সবকিছু পাওয়ার পর আমার স্ত্রীকে বললাম এত খরচ, পেরে উঠতে পারছি না। এর মধ্যে ফাহিম ভাইয়ের ফোন। বিল পাঠাচ্ছেন না কেন? সেই নিয়োগের দিন থেকে ওই মাস পর্যন্ত বিল একসাথে পাঠালাম। তার পরেও ক্যামেরা ভাড়া দিয়ে আর পারছি না।

ক্যামেরা কিনে শুরু হলো নতুন করে আবারও পথচলা। সেই উচ্ছ্বাস আর আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নিজের ক্যামেরা দিয়ে নিজেই ভিডিও করছি আবার নিজের ল্যাপটপে এডিট করে যখনকার ঘটনা তখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি। সে কী যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ভুল না হলে বাংলাদেশে আমিই প্রথম ভোলা থেকে ভিডিও পাঠিয়েছি স্পষ্ট ও নিখুঁতভাবে, যা তখন প্রচার হয়েছে এনটিভিতে। তবে কোনও একটা ফটো এজেন্সি একটা ভিডিও পাঠিয়েছিলে আমার পাঠানোর দু-তিন দিন আগে, যা আটকে ছিল। সেটা কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। সবাই ক্যাসেট পাঠায় আর আমি যে দিনকার ঘটনা সে দিন পাঠাচ্ছি এবং প্রচার হচ্ছে। গ্রাম আর চরাঞ্চল সর্বত্র গিয়ে ২জি ইন্টারনেট, যা কানেক্ট করতাম ইনফ্রারেডের মাধ্যমে।

ভিডিও ফুটেজ এফটিপিতে তুলে দিয়ে বসে বসে চেয়ারে ঘুমাতাম আর দেখতাম কত ভাগ গিয়েছে। অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম টিভি সাংবাদিকতায়। তবে এনটিভি পরিবার বলেই সব সময় উৎসাহ পেতাম ন্যাশনাল ডেস্ক থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকে। সব সময় নিউজ নিয়ে কোনও সমস্যা হলেই ফাহিম ভাই, আনিস ভাইয়ের সাথে কথা বলতাম বেশি। তাঁরাও সুন্দরভাবে পরামর্শ দিতেন।

ফাহিম ভাই চলে যাওয়ার পর আনিস ভাই ও মনিরা আপা সব সময় পরামর্শ দিয়ে আসতেন। এখন পর্যন্ত যা অব্যাহত রয়েছে। তৎকালীন প্রধান বার্তা সম্পাদক খাইরুল আনোয়ার মুকুল ভাই খুবই ভালোবাসতেন আমাকে। দেখলেই রুমে ডেকে নিয়ে কথা বলতেন আর প্রশংসা করতেন কাজের। উৎসাহ দিতেন আরও কাজ করার।

জহির ভাই দেখলেই হাসি দিয়ে বলতেন ভোলার কী খবর। ভালো নিউজ করছেন তো। কাজ করুন, কোনও সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। এমনটাই ছিল জহির ভাইয়ের ভালোবাসা, যিনি এখন পর্যন্ত আমাদের আগলে রেখেছেন। বর্তমান চিফ অব করেসপন্ডেন্ট আরিফ ভাই শুরু থেকেই আমাকে ভালোবাসতেন। বেশ স্নেহ করতেন। হাসি দিয়ে কথা বলতেন। তখন থেকেই খোঁজখবর নিতেন তিনি।

ন্যাশন্যাল ডেস্কের মনিরা আপা, যিনি আমাদের বড় বোন। আমরা জেলায় কাজ করছি এমনটা তিনি কখনওই ভাবেন না। ছোট ভাই মনে করে ভালোবাসেন। একদিন দুপুরে গিয়েছি অফিসে, কৌশলে নিজের খাবারটা দিয়ে বলতেন যান খেয়ে আসেন। বড় বোনের দায়িত্ব পালন করেন সব সময় তিনি। এভাবেই আমাদের এনটিভি পরিবার।

আমাদের চেয়ারম্যান স্যার, যিনি সব সময় বলেন আমরা একটা পরিবার। তিনি সব সময় নিজ সন্তানের মতো আগলে রাখেন আমাদের। তাই তো চেষ্টা করেন আমাদের কিছু না কিছু দেওয়ার। বাংলাদেশে প্রথম তিনিই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ল্যাপটপ। একসাথে এতগুলো ল্যাপটপ তুলে দেওয়ার ঘটনা এখন পর্যন্ত নেই। ইউপি নির্বাচনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় বিদেশ থেকে এসেই ছুটে এসেছেন আমাকে হাসপাতালে দেখতে। করেছেন সর্বোচ্চ সহযোগিতা। যে কোনও বিপদে চেয়ারম্যান স্যারসহ পুরো এনটিভি পরিবার পাশে ছিলেন। তাই তো যত বড় অফার এসেছে, সরাসরি বলেছি এই পরিবার ছেড়ে কোথাও যাব না।

বহু বার হামলার শিকার হয়েছি এবং ক্যামেরা ও ল্যাপটপ হারিয়েছি এনটিভিতে কাজ করতে গিয়ে। ইটভাটায় ফেলে দেওয়া, ভাঙচুর করা, গ্রিন ক্রিসেন্ট, কোকো লঞ্চডুবিসহ অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দেওয়া আর সেখান থেকে সংবাদ ও ভিডিও সংগ্রহ করতে হয়েছে। আধুনিকতায় ল্যাপটপের মাধ্যমে স্কাইপের মাধ্যমে লাইভ করা থেকে শুরু করে এখন ক্যামেরা দিয়ে লাইভ করছি। সেটাও আমার আগে ক্যামেরা দিয়ে লাইভ করা হাতেগোনা দু-চার জন থাকতে পারে। সবই এনটিভির জন্য সম্ভব হয়েছে।

অপরদিকে এনটিভিকে আরও এগিয়ে নিয়েছে আমাদের এনটিভি অনলাইন পোর্টাল। সম্পাদক ফকরউদ্দীন জুয়েল ভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে সবার আগে সবাই সত্য ঘটনা তুলে ধরেন পোর্টালটিতে। তিনি একজন দক্ষ মানুষ। জনপ্রিয়তার উচ্চতায় অবস্থান করছে এখন এনটিভি অনলাইন। একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। জুয়েল ভাই হাসিখুশি মানুষ। এই বিভাগের সবাই খুবই ভালো মনের এবং অত্যন্ত দক্ষ। সত্যিই আমরা একটি পরিবার। আর এই পরিবারের অভিভাবক আমাদের চেয়ারম্যান স্যার আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী।

লেখক : স্টাফ করেসপনডেন্ট, ভোলা