ওপারে ভালো থাকবেন শহিদ ভাই

Looks like you've blocked notifications!

করোনায় আমরা অনেককেই হারিয়েছি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ গুণীজনের বিদায়ে, ফলে দিনে দিনে সমাজ হয়ে পড়ছে অভিভাবকহীন।

তেমনই একজন আমাদের আবদুস শহিদ ভাই, যিনি ছিলেন এনটিভির যুগ্ম-প্রধান বার্তা সম্পাদক। এর আগে বার্তা সম্পাদক হিসেবে এনটিভিতে কর্মরত ছিলেন প্রায় একযুগ। ছিলেন, সাংবাদিক নেতা। নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে)।

শহিদ ভাইয়ের চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এনটিভির নিউজরুম। এনটিভিতে আমার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে  বিশেষ করে স্ক্রিপটিংয়ের যতোটুকু শিখেছি তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশই হাতে কলমে শিখিয়েছেন শহিদ ভাই।  

বুঝিয়েছেন- স্ক্রিপ্টের কোথায় মন্তব্য কিংবা অভিযোগ লেখা শ্রেয়, আবার কখন জানিয়েছেন না বলে দাবি করেন বলা উচিত.... লক্ষ/উপলক্ষ/লক্ষ্য অথবা বাঁধা/বাধা কোনটি কোথায় বসবে.... এমন খুটিনাটি অনেক ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, বুঝিয়ে বলেছেন।

শব্দ চয়ন এবং বানানের ব্যাপারে প্রচণ্ড সতর্ক ছিলেন শহিদ ভাই। শুধু শব্দ চয়ন অথবা বানান ভুল ধরা নয়, তাঁর ছিল অসাধারণ নিউজ সেন্স। তবু সংবাদের হেডলাইন ঠিক করা এবং রানডাউন সাজানোর সময় পাশে ডাকতেন। বলতেন- ‘তরুণ, পাশে বসলে শিখতে পারবে, ভুল ধরতেও পারবে, তোমাদের মতো কয়েকজন যুবক পাশে থাকলে সাহস পাই, ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখি এই বয়সেও...।’

নিউজরুমে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ শহিদ ভাই ছিলেন আমাদের অভিভাবকতূল্য। যেকোনো সমস্যা, সংকট মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, অভিজ্ঞতার আলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে পরামর্শ দিতেন।

ওনার সবচেয়ে বড় গুণ- প্রত্যেকের সঙ্গেই আলাদা একটা সম্পর্ক ছিল, সবাইকেই নিজস্ব ঢংয়ে সম্বোধন করতেন।

যেকোনো আড্ডায় শহিদ ভাইয়ের তুলনা তিনি নিজেই। এতো সিনিয়র অথচ প্রচণ্ড আমুদে এবং আড্ডাবাজ মানুষ সচারচর হয় না।

জীবন সায়াহ্নের শেষদিনগুলোতে লাইফস্টাইলেও বেশ পরিবর্তন এনেছিলেন। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনসহ সমাজকল্যাণমূলক নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন এতিমখানা, মসজিদ-মাদ্রাসা। ধ্যানে-মনে সব সময় ভাবতেন তাঁর নিজ হাতে গড়ে ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান নিয়ে। ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে এতিম বাচ্চাদের জন্য বাজারে গিয়ে খাবার কিনতেন নিজ হাতে।

 পেশাদার সাংবাদিক না হয়ে, চাইলেই বাড়ি-গাড়ি করতে পারতেন অনায়াসে। সাংবাদিকতা না করে সমঝোতা করে চলতে পারতেন সাংবাদিকদের নেতা হয়ে। অথচ মানুষের কাছে অকপটে হাত পেতেছেন এতিমদের জন্য।

শহিদ ভাই! ভালো থাকবেন ওপারের ভুবনে...।

লেখক : সিনিয়র করেসপনডেন্ট, এনটিভি