খুশি যেখানে সবাই

Looks like you've blocked notifications!

একদেশে এক গেরস্তের ছিল দুই কন্যা। হাসি ও খুশি তাদের নাম। খুশির চেয়ে হাসি এক বছরের বড়। উভয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে।

অবস্থাশালী পরিবারের একজন সুপাত্রের সঙ্গে হাসির বিয়ে হয়েছে। পাত্রপক্ষ একটি সাংসারিক ও ভালো মেয়েকে নিজেদের ঘরে বউ করে আনতে পেরে বেজায় খুশি।  স্বীয় কন্যাকে একটি ভালো পরিবারে পাত্রস্থ করতে পেরে পাত্রীপক্ষ আরও বেশি খুশি।

দুলাভাই একদিন সন্ধ্যা বেলায় বিপুল পরিমাণ উপহার সামগ্রী নিয়ে খুশিদের বাড়িতে বেড়াতে এলেন। খুশিরাও সাধ্যমত আদর-আপ্যায়নে নানা আয়োজন করেছেন নতুন জামাইয়ের জন্য। নতুন দুলাভাই আর শালীর রসিকতা আর দুষ্টুমি আবহমান বাংলার একটি চিরায়ত রীতি। এটিকে পরিবারের লোকজন খুব সহজভাবেই নিয়ে থাকে।

ডাবের পানি আর শরবত নিয়ে দুলাভাইকে স্বাগত জানিয়ে কথা শুরু করলো খুশি। মজার মজার গল্প বলতে বলতে সময় গড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা থেকে রাত। হৃদ্যতা আর আন্তরিকতার সীমা ছাড়িয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হতে থাকে শালী আর দুলাভাইয়ের সম্পর্ক।

বিশ্বমন্দার কবলে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয় করতে গিয়ে রুটিন অনুযায়ী এখন লোডশেডিং হচ্ছে। আজ রাতে এখানে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ছিল না। শিডিউল ও নিয়ম-নীতি ভেঙ্গে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিকে। খুশি আর তার দুলাভাইয়ের সম্পর্কটি শীতল পর্যায় থেকে গভীর উষ্ণতার দিকে ধাবিত হতে থাকল। এক পর্যায়ে খুশি বললো, দুলা ভাই- আমি খুশি। দুলা ভাই চলমান সম্পর্কটি আরও গভীর করার চেষ্টার ত্রুটি রাখলেন না। খুশি আবারও বলে উঠলো, দুলাভাই আমি খুশি। দুলাভাই এবার বলে উঠলেন, তুমি কী খুশি। আমি তোমার চেয়ে আরও বেশি খুশি। উপায়ান্তর না দেখে খুশি দুলাভাইকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে উঠল, দুলাভাই আমি ‘হাসি’ না। আমি ‘খুশি’। আমি হাসি আপুর ছোটবোন খুশি। দুলাভাই যখন ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন ততক্ষণে ‘ঘটনা’ অনেক দূর গড়িয়েছে।

গোটা বিশ্বই এখন ফুটবলজ্বরে আক্রান্ত। আমরা মনে হয় একটু বেশিই আক্রান্ত। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা  দুইভাগে বিভক্ত দেশের ফুটবল প্রেমীরা। সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে উৎসাহেরও কমতি নেই। এ উৎসাহের মধ্যেও অতিমাত্রার ‘বাঙালি রোগ’ ঢুকে পড়েছে। তা নাহলে সমর্থন নিয়ে ল্যাটিন আমেরিকার এ দুই দেশের ফুটবল টিমকে সমর্থন করতে গিয়ে আমরা কেনো রক্ত দেবো ও মারা যাবো? 

শুক্রবার দিবাগত রাতে একটি মিলনায়তনে রাত ৯টা ও ১টার খেলা দেখতে সমবেত হয়েছিলাম আমরা কুড়ি জনের মতো। সব জায়গার মতো এখানে কেউ আর্জেন্টিনা  সমর্থক আবার কেউ ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক। এর বাইরে তেমন কেউ ছিলেন বলে আমার জানা ছিল না। ব্রাজিল টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর চিৎকার দিয়ে উঠলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইরে বিশাল মিছিল। আওয়াজ কানে ভেসে আসতে থাকল ‘ব্রাজিল ভূয়া’ ব্রাজিল ভূয়া’। খেলায় হারলো ব্রাজিল আর জিতলো ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিলের এ হারে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা কেনো ‘খুশি’ হলো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকায় তা বুঝতে পারছি না।

আর্জেন্টিনা যখন অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল সৌদি আরবের কাছে ধরাসায়ী হল তখনও দেখা গেলো ব্রাজিলের সমর্থকরা বেজায় খুশি হয়েছেন। তারাও একই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ওই সময়। আর্জেন্টিনার ওই হারে ব্রাজিলও তখন ‘খুশি’ হয়ে একই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।

যাহোক কাতারে চলছে ফুটবল মহাযজ্ঞ। ফুটবলের এই ২২ তম আসরে এখনও হারের মুখ দেখেনি চমক জাগানো মরক্কো। প্রায় নয় দশকের ইতিহাসে নিজেদের নামটি খোদাই করে লিখিয়েছেন মরক্কোনরা। আফ্রিকার দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে দলটি। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো তারকার দেশকে হারিয়েছে ১-০ গোলে। এজন্য  ফুটবল প্রেমীসহ বিশ্ববাসী খুশি।

তবে এবার মরক্কো চ্যাম্পিয়ন হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। বরং বিশ্ববাসী সেটিকে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। ফুটবল ভক্তরা অপেক্ষা করছেন মরুর বুকে মরক্কোর নতুন ইতিহাসের জন্য। যেটি বহন করবে নতুন খুশির বার্তা।

লেখক : সাংবাদিক।