জাস্টিন ট্রুডোর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে?

Looks like you've blocked notifications!

কানাডার ৪৪তম জাতীয় নির্বাচন আগামী ২০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে হিসাবে কানাডার ফেডারেল নির্বাচনের বাকি মাত্র তিন দিন। আর, এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশটির পরবর্তী শাসন ব্যবস্থায় কারা থাকছে। যেটা কানাডার নাগরিকেরা ১৫১ বছর ধরে চলে আসা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে নির্ধারণ করবেন, যাতে তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রসারিত হয়।

কেন এই মধ্যবর্তী নির্বাচন

বর্তমানে দ্য লিবারেল পার্টি অব কানাডা দলের নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনা করে আসছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। সমস্যাটা শুরু হয় সাংবিধানিক কিছু নীতি অনুমোদন করা নিয়ে। কারণ, সংসদে তাদের অবস্থান সংখ্যালঘু। গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলটি ১৫৫ আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিল, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ১৭০ আসন লাগে। এ কারণে সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন ইস্যু অনুমোদন করতে তাদের সমস্যা হয়। বিশেষ করে, বিরোধী দল এবং অন্যান্য দল অনেক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে ভেটো দেয়। যার ফলে সংসদের চলমান ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু, গত মাসে লিবারেল পার্টির নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমনকে সংসদ ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন জাস্টিন ট্রুডো তাঁর বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেন যে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কানাডার সব রাজনৈতিক দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার ৪৪তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। যদিও কানাডার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে।

 নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল

* দ্য লিবারেল পার্টি অব কানাডা - নেতা জাস্টিন ট্রুডো

* দ্য কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডা - নেতা এরিন ও’টুল

* গ্রিন পার্টি - নেতা অ্যানামি পল

* দ্যা নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি- নেতা জগমিত সিং

* ব্লক কুইবিকইস- নেতা ইভেস ফ্রাঙ্কোয়া ব্ল্যাঞ্চেট (এটি কুইবেকভিত্তিক দল হলেও কেন্দ্রীয় নির্বাচনের দৌড়ে আছে।)

* দ্য পিপলস পার্টি অব কানাডা - নেতা ম্যাক্সিম বার্নিয়ার

নির্বাচনি এজেন্ডা

কানাডার রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি এজেন্ডা প্রায় একই। জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টির এজেন্ডার সঙ্গে অন্যান্য দলের এজেন্ডার অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আরোপিত কার্বন ট্যাক্সকে সমর্থন।

২. ব্যক্তি অধিকারের ওপর ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হস্তক্ষেপ

৩. করোনা টিকার যথাযথ তত্ত্বাবধান

৪. বাম রাজনীতির সঙ্গে নতুন কিছু নীতিমালা সংমিশ্রণ

৫. করোনার কারণে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার

৬. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

বর্তমানে লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো দেশটির শাসনভার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই সরকার মূলত সমর্থন হারিয়ে সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। ফলে যেকোনো রাজনৈতিক বিল পাস বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে লিবারেল পার্টিকে অনেক বেশি বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আর, এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদ ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছেন। কানাডায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আগামী দুই বছর পরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা। দুই বছর আগেই এ নির্বাচন হচ্ছে। কারণ, জাস্টিন ট্রুডো মনে করছেন—তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরতে পারবেন এবং পরবর্তীকালে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আর বেগ পেতে হবে না। কারণ, সংসদে লিবারেলদের নীতি-কর্মসূচি বাস্তবায়নে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার।

কানাডার সংসদ

কানাডার কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৩৩৮টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭০ আসন।  

গত নির্বাচনে লিবারেলরা হাউস অব কমন্সে ১৫৫ আসন পেয়ে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। অপরদিকে, কনজারভেটিভদের ১১৯, ব্লক কিউবিকইস ৩২, নিউ ডেমোক্র্যাটস ২৪ এবং গ্রিন পার্টি দুটি আসন পায়। পাঁচটি আসন ছিল স্বতন্ত্রদের দখলে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভ্যাঙ্কুভার সানে ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ সেপ্টেম্বরের এক জরিপে দেখা যায়, জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টির অবস্থান তৃতীয়। প্রথম অবস্থানে আছে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ৩৫ ভাগ ভোটার এনডিপিকে সমর্থন করছেন। তেত্রিশ ভাগ ভোটারের সমর্থন রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে। আর, লিবারেল পার্টির সমর্থন ১৯ ভাগ।

জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, ব্রিটিশ কলাম্বীয়দের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ ট্রুডোর কার্যক্রমকে সমর্থন করেছেন, যেখানে এনডিপি নেতা জগমিত সিংয়ের ৫৬ শতাংশ এবং কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এরিন ও’টুলের ৩৮ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ৫৭ শতাংশ মানুষ ট্রুডোর গত ছয় মাসের কার্যক্রমে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। পোল অনুসারে সে ক্ষেত্রে মাত্র ৫% জনগণ এতে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, তাঁরা এই ফেডারেল সরকারের পরিবর্তন চান।

বিবিসি, আর এয়ার ফাউন্ডেশন ও ভ্যাঙ্কুভার সান অবলম্বনে

লেখক : সাংবাদিক