জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, সব খাতেই চাপ বাড়বে

Looks like you've blocked notifications!

কার্যকর হয়েছে জ্বালানি তেলের নতুন দাম। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে বলছে—ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে লাগবে ১১৪ টাকা। অকটেন কিনতে প্রতি লিটারে দিতে হবে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার পরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনটিভি অনলাইনকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুজন বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক—

জ্বালানি খাতের মূল্য বৃদ্ধি সব খাতেই চাপ তৈরি করবে

জ্বালানি খাতে মূল্য বাড়ানো ছাড়া সরকারের কোনো বিকল্প উপায় ছিল না। কিন্তু যে হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ মানুষ, উৎপাদন খাতসহ সকল খাতেই এর প্রভাব পড়বে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সরকার সেটা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করতে পারত। আমরা জানি যে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য এখন ১০০ ব্যারেলের নিচে নেমে আসছে। আস্তে আস্তে দাম কমে আসছে। সরকার আরেকটু ধৈর্য ধরে দেখেশুনে হয়তো ১০-২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করতে পারত। এভাবে ৪০-৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করায় দেশের অর্থনীতিতে একটা অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে।

বিশেষ করে পরিবহণ, কল-কারখানা ও পোশাক শিল্পসহ সব খাতেই চাপ তৈরি করবে। তবে সরকারের বিকল্প ছিল না। কারণ, জ্বালানি আমদানিতে সরকারকে যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে এবং রিজার্ভে হয়তো টান পড়ায় সরকার এটাকে সমন্বয় করতে চাচ্ছে। তবে যে ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে এতে জনগণ, ক্রেতা, ভোক্তা ও উৎপাদনকারীসহ সবার ওপরেই একটা বড় ধরনের প্রভাব আসতে পারে।

*ইলিয়াস হোসেন, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে

জ্বালানি খাতে মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় পরিবহণ খাতে মানুষের খরচ হয়তো অনেক বেড়ে যাবে। পাঁচ টাকার ভাড়া হয়তো দশ টাকা বা তার কাছাকাছিও হয়ে যেতে পারে। দেশের সিংহভাগ উৎপাদন খাতেই বা কল-কারখানা অথবা মিল-ফ্যাক্টরিতে জ্বালানির ব্যবহার হয়ে থাকে। জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। এরপর আলটিমেটলি সবকিছুর দাম বাড়বে। আর এ দাম বাড়া মানে হলো মানুষের আয় কমে যাওয়া। কারণ, শ্রমিকের বেতন বাড়ার সম্ভাবনা তো কম। এ ক্ষেত্রে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে এক ধরনের তফাত সৃষ্টি হবে। তখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে, কিছুটা হলেও জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে।

মানুষ আসলে এটা আশা করবে যে, শাসক শ্রেণি এটাকে রি-ডিজাইন করবে কি না। সামগ্রিকভাবে যারা সরকারের অর্থনীতিকে ডিল করে, তারাও এ ব্যাপারটিকে নিয়ে ভাবছে বা অবশ্যই ভেবে থাকবে। যদি এটাকে রি-ডিজাইন করা সম্ভব হয়, তাহলে তারা তো অবশ্যই করে ফেলবে। তখন হয়তো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাবে। আর যদি করা সম্ভব না হয়, তখন মানুষ একটু নারাজ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। জনগণ তো জনগণের মতোই ভাববে। তারা তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যে, তাদের সুবিধা অনুযায়ীই সব কিছু হোক। এভাবে কিছু দিন চলবে, তারপর মানুষ এগুলো ভুলে গেলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

*মুহাম্মদ রুহুল আমিন, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়