পদ্মা সেতু
ঝালকাঠির পরিবহণ, কৃষি, পর্যটন ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়বে
পদ্মা সেতু উদ্বোধনে উপকূলের জেলা ঝালকাঠিবাসীরও স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যাবে ঝালকাঠির বাস, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এখানকার জনগণ। বুকে আশা বেঁধে আছেন জেলার কৃষকেরাও। তাদের উৎপাদিত পণ্য এখন পাড়ি দেবে পদ্মা সেতু। কৃষক-শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন কারখানার মালিকেরাও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
সেতু উদ্বোধনের পরপরই পরিবহণ ব্যবসায়ী ও বাস-শ্রমিকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতিতে প্রায় একশ বাস রয়েছে। এ বাসগুলো নিয়মিত ঝালকাঠি-বরিশাল রুটে চলাচল করে। এ রুটের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া আশপাশের দু-একটি রুটে বাসচলাচল করলেও সেখানে ট্রিপের সংখা খুবই কম। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঝালকাঠি থেকে সরাসরি স্থানীয় মালিক সমিতির বাস ঢাকা রুটে চলাচল করবে। এ ছাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় বাস চলাচল শুরু হতে পারে। এতে মালিকদের পাশাপাশি লাভবান হবেন শ্রমিকেরাও। দীর্ঘদিন বেকার থাকা বাস শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ঝালকাঠি জেলা সদর থেকে লঞ্চ বা বাসযোগে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগত ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। আবার কখনও ফেরিঘাটে যানজটের কারণে সময় লেগে যেত ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টাও। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে মাত্র পাঁচ মিনিটে বাসযোগে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে ঢাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন এবং এর ওপর থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হলে ঝালকাঠি জেলার বাস মালিক এবং শ্রমিকেরা কীভাবে উপকৃত হবে, সেই স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠি জেলার পরিবহণ ব্যবসার সাথে যুক্তরা।
ঝালকাঠি জেলা বাস মালিক সমিতির সহসভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, ‘আমি কল্পনাও করিনি পদ্মা নদীর ওপর থেকে গাড়িতে করে ঢাকা যাব। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য অবদানের কারণে আজ তা বাস্তবে দেখতে যাচ্ছি।’
এখন ঝালকাঠিবাস মালিক সমিতির বাস ঢাকা রুটেও চলাচল করতে পারবে। গাড়ির বর্তমান মালিকেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। পরিবহণ খাতে নতুন বিনিয়োগকারী অর্থ লগ্নি করতে আসবে। কারণ, বাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। নতুন আধুনিক বাস ঝালকাঠিতে যুক্ত হওয়ায় ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। শুধু যাতায়াতে সুবিধা নয় ঝালকাঠি জেলার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন মাহমুদ বাচ্চু বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে ঝালকাঠি জেলার সাধারণ মানুষের সাথে এ জেলার বাস মালিকেরাও উপকৃত হবে। এখন আমাদের বাসগুলো শুধু লোকাল যাত্রী পরিবহণ করে। সেতু চালু হওয়ার পর আমাদের সমিতির বাস ঢাকার পথেও যাত্রী পরিবহণ করবে। ঝালকাঠি থেকে ঢাকা রুটে বাসচলাচল করলে প্রতি ট্রিপে (আপডাউন) যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় হবে ৫০ হাজার টাকা। এতে ঝালকাঠির বাস মালিক এবং শ্রমিক উভয়ই লাভবান হবে। শ্রমিক এবং মালিকদের আর্থসামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।’
ভীমরুলি ভাসমান হাটে পর্যটকের সংখা বাড়বে
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর থেকে ব্যবসা-বণিজ্য পর্যটনসহ সব ক্ষেত্রে উন্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত। বিশেষ করে ঝালকাঠির পেয়ারা বাগানখ্যাত সদর উপজেলার তিন ইউনিয়নে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পর্যটকদের যে আনাগোনা ছিল তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি খালে বছরের সব সময়ই নৌকায় কৃষি পণ্যের বেচা বিক্রি চলে। পেয়ারার ভরা মৌসুম বর্ষকালে ভীমরুলি খালে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শতশত নৌকায় চলে পেয়ারা, আমড়া, কলাসহ নানা কৃষি পণ্যের বেচা বিক্রি। আর এই বর্ষা মৌসুমে ভাসমান বাজার এবং পেয়ারা বাগানে ঘুরতে আসে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে পর্যটকদের আগমন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে এ অঞ্চলের মানুষের ধারণা। পর্যটক বৃদ্ধির ফলে এ এলাকার মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে। শুধু পেয়ারা রাজ্য ভীমরুলি নয় পদ্মা সেতুর প্রভাবে ঝালকাঠির আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় গড়ে উঠতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মু. মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ঝালকাঠি জেলার ব্যবসায়ীদের জন্য পদ্মা সেতু আশীর্বাদ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে ঢাকার সাথে সড়কপথে যোগাযোগের দূরত্ব কমবে ৯০ কিলোমিটার। সময় কমবে কয়েক ঘণ্টা। এ কারণে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রচুর মানুষ ছুটে আসবে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধি ঘটবে। ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে লবণ, রড, সিমেন্ট ও টিন ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠিতে এক সময় ৪০টি লবণের মিল ছিল, যার মধ্যে বর্তমানে ১০-১২টি চালু আছে। পদ্মা সেতুর প্রভাবে বন্ধ হওয়া লবণ মিলগুলো চালু হলে ব্যবসায়ীরা খুব বেশি লাভবান হবে।’
ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঝালকাঠিবাসীর জন্য একটি আশীর্বাদ। এর ফলে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা যেতে পারব। আবার কাজ শেষে দিনে দিনে বাড়িতে ফিরে আসতে পারব। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
এর ফলে এলাকার কৃষি পণ্য সহজেই ঢাকায় পৌঁছে যাবে। শিল্প-কলকারখানা বেড়ে যাবে। সব শ্রেণির মানুষের উপকার হবে। প্রতি বছর ঝালকাঠি সদরের ভীমরুলি খালে ভাসমান পেয়ারা ও সবজির বাজার এবং পেয়ারা বাগান দেখতে হাজার হাজার পর্যটক আসে। পদ্মা সেতু চালুর পরে সেই পর্যটকদের সংখ্যা বহু গুণ বেড়ে যাবে।