প্রথম পর্ব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : অদম্য ছুটে চলা ক্লান্তিহীন এক নির্ভীক যোদ্ধা

Looks like you've blocked notifications!

কপ-২৬ সম্মেলনের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করব, কিন্তু শুরু কীভাবে করব বুঝতে পারছি না। কারণ, কোনো উপমা দিয়ে এই অভিজ্ঞতার যথার্থ উপস্থাপন সম্ভব নয়।

আমি জানি না লেখাগুলো কীভাবে পাঠকের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তবে আমি চাই আকর্ষণীয় হোক বা না হোক, সবাইকে যদি আসল চিত্রটা জানাতে পারি তাহলেই আমার চেষ্টা সার্থক হবে।

কপ-২৬ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুদিন নির্দিষ্ট করে প্রোগ্রাম দিয়েছেন। প্রথম দিন ১ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় দিন ২ নভেম্বর।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গ্লাসগো শহর। যেহেতু বিশ্বের নেতৃবৃন্দ এখন এখানে অবস্থানরত, তাই ভাবতেই পারছেন কেমন কঠিন নিরাপত্তাবেষ্টিত পুরো শহর এবং সম্মেলন কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকাগুলো।

এটা আমার জীবনের এক বিশাল অভিজ্ঞতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যসূচি অনুযায়ী মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় পরিবেশ মন্ত্রী মহোদয় ১ নভেম্বর ভোরে ঘুম থেকে উঠেই রওনা হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে; কেননা সকাল ১০টায় কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে কপ-২৬-এর প্রথম প্রোগ্রামটি  অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। খুব সকালে রওনা হয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান পর্যন্ত পৌঁছাতে ট্রাফিক জ্যামের কারণে অনেক দেরি হয়ে গেল। তার পরও দুজন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়সহ আমরা চারজন সেখানে পৌঁছালাম। বাসস্থানের সীমানার কাছে পৌঁছানো মাত্রই দেখলাম নিরাপত্তারক্ষীরা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন বাসার প্রতিটা ইঞ্চি জায়গা। যেদিকে তাকাই শুধুই দেখি কালো গাড়ি আর কালো পোশাকধারী সানগ্লাস পরিহিত নিরাপত্তারক্ষীদের। আমাদের গাড়ি কয়েক বার আটকানো হলো; কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের সাথে কথা না বলেই নিরাপত্তারক্ষীরা ওয়ারল্যাসে কার সাথে কথা বললেন এবং  ইশারা করলেন সামনে যাওয়ার জন্য। অনেক সিকিউরিটি গেট পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছালাম বাসার মূল ফটকে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসার মূল ফটকে উপস্থিত হতেই দুটি গাড়ির উদ্দেশে দ্রুত হেঁটে এগিয়ে আসেন দুজন অফিসার, উনারা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়দের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখনই যাত্রা করবেন আর যেহেতু ট্রাফিক অনেক বেশি তাই সম্মেলনস্থলে দ্রুত পৌঁছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সম্মেলন কক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আমরা আবারও যাত্রা শুরু করলাম। রাস্তা এখন আগের চেয়ে ফাঁকা, তবে দ্রুত গাড়ি না চালানোর জন্য পুলিশের গাড়ি সবার গতি কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা যথাসময়ে পৌঁছালাম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।

কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে দুটি দিক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। আমি ঠিক সামনে অপেক্ষা করতে থাকলাম আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি; কারণ, কেউ বলতে পারেন না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোন দিক দিয়ে আসবেন আর যেহেতু এখানে আমাদের দুই মন্ত্রী মহোদয় ছাড়া আর তেমন কেউ (বাংলাদেশের), এখনও উপস্থিত হননি, তাই কাউকে জিজ্ঞাসা করে কোনও লাভ নেই।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ দূরে থেকে দেখলাম বীরদর্পে মৃদু পায়ে হেঁটে আসছেন বাংলার মানুষের শেষ ঠিকানা, আমাদের গৌরব আর অহংকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা।

আমি সাথে সাথে ফোন বের করে রেকর্ড করতে লাগলাম। উনি এসে পৌঁছালেন এবং অবনত চিত্তে উনাকে অভ্যর্থনা জানানো হলো কমনওয়েলথের পক্ষ থেকে। আমার রেকর্ডিং তখনও চলছে। পাশে থেকে কানে ভেসে আসল এক ভিনদেশি আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সাথের মানুষকে প্রশ্ন করল, Who is She? (উনি কে?)। পাশের ভিনদেশি নারী উত্তর দিলেন, She is the Prime Minister of Bangladesh Her Excellency Sheikh Hasina। (উনি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)।

আসলেই, সম্মান কখনওই জোর করে আদায় করা যায় না, কিংবা টাকাপয়সা দিয়ে ক্রয় করা যায় না। সম্মান জিনিসটা অর্জনের, সম্মান জিনিসটা ভালোবাসার!

কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে, তা বিরল। আবার দুই অগান্তুক যখন একে অন্যকে প্রশ্ন করল আর অন্যজন যে উত্তর দিল (সে কিন্তু বলতে পারত উনি শেখ হাসিনা, কিন্তু তা না বলে সে বলল, উনি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলনস্থলে আসার যে ভিডিও আমি ফেসবুকে দিয়েছি, ওই ভিডিওর ৩৯ সেকেন্ড থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনলে আপনারাও শুনতে পারবেন; তা থেকে সহজে অনুমেয় যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের বুকে নিজেকে সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যে জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উনাকে কুর্নিশ করে, সমীহ করে, শ্রদ্ধা করে আর বিশ্বের সাধারণ জনতা সবাই উনাকে চেনে এবং ভালোবাসে!

কমনওয়েলথের প্রোগ্রাম শেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন হেঁটে পরের কনফারেন্স রুমের দিকে রওনা হলেন, তার একটু পরেই কমনওয়েলথ সেক্রেটারি পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড দৌড়ে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিরোধ করে একটি ছবি তোলার অনুরোধ করলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেসে সম্মতি দিলেন। তার পর কমনওয়েলথ সেক্রেটারি অনুরোধ করলেন যে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দেন তাহলে তিনি (কমনওয়েলথ সেক্রেটারি) উনার সাথে বাকি প্রোগ্রামগুলোতে যেতে চান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেন এবং উনিও বাকি সময় সাথে থাকলেন।

বিরতি ছাড়া একটার পর একটা  (কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়ন, স্কটল্যান্ড প্যাভিলিয়ন, বিল গেটস, প্রিন্স চার্লসসহ বিশ্বনেতাদের সাথে মূল সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান উল্লেখ্য) মিটিং করে বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থল ত্যাগ করলেন।

যথারীতি দ্বিতীয় দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমরা কপ-২৬-এর সভাপতির ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। সেদিন ছিল সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিরতিহীন প্রোগ্রাম। আমি নিজে প্রোগ্রামের কাগজ পড়েই অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। আমার দেখা যে কোনও মানুষের পক্ষে বাস্তবায়ন করার জন্য অসম্ভব একটি শিডিউল।

১২টা মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা, তাও আবার প্রতিটি মিটিংয়ের আলাদা সম্মেলন কক্ষ, একটা থেকে আরেকটা মিটিংয়ের সময়ের ব্যবধান মাত্র পাঁচ মিনিট এবং প্রতিটি মিটিংয়ের স্থায়িত্ব ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা।

আমি অবাক হয়েছি, যখন দেখলাম কোনও বিরতি না নিয়ে দুপুরের খাবার না খেয়ে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যে পরিশ্রম উনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) করলেন, আমি এমনটা আর কাউকে দেখিনি। কিন্তু উনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) প্রতিটা মিটিংয়ে উপস্থিত হয়েছেন সঠিক সময়ে এবং কোনও জড়তা বা ক্লান্তির ছাপ পরিলক্ষিত হয়নি। উনি ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল।

কপ-২৬-এর মূল সম্মেলন কক্ষে কপ-২৬-এর সভাপতি, সেক্রেটারিসহ সব দেশের প্রতিনিধিগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে সম্মান দেখিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

আমি গত কয়েক দিন সার্বক্ষণিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামগুলো দেখে যে কয়েকটি জিনিস অনুধাবন করেছি তা হলো, উনি আপাদমস্তক একজন আমানতদার। উনার কর্মস্পৃহা দেখে মনে হলো উনি বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আমানতকে যত দিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারবেন, তত দিন পর্যন্ত উনার এই পরিশ্রম অব্যাহত থাকবে।

সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত যেভাবে পরিশ্রম করছেন, সেটা যেন আমাদের কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়। আমাদের কোনও কাজে দল যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ে। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করবেন।

লেখক : তরুণ উদ্যোক্তা ও রাজনীতিক