পদ্মা সেতু

ভালোবাসার নাম পদ্মা সেতু

Looks like you've blocked notifications!

প্রত্যেক মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়। কিন্তু তার পরেও আমরা কত বড় স্বপ্ন দেখতে পারি, তা নিয়ে সংশয় আছে। স্বপ্নের এই বিষয়টি অবতারণা করলাম, পদ্মা সেতুর কথা বলব বলে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে দিন ঘোষণা করলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে, সে দিন গোটা জাতি আবেগে ভেসে গেলেও ওই ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমরা সেটি ভাবতেও পারিনি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেটি আজ সত্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্যালুট জানাই, কেননা আমাদের কল্পনার পদ্মা সেতু আজ বাস্তব। বিশ্বের খরস্রোতা নদীর মধ্যে অন্যতম একটি পদ্মা। সেই নদীতে সেতু নির্মাণ একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। আর সেই সেতুর উপরে যদি ‘অপবাদ ও ষড়যন্ত্রের’ পাহাড় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা দাঁড় করানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

পদ্মায় সেতু নির্মাণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করেছেন। দেশের অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ হিসেবে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের যে আবেগ ভালোবাসা তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা দুরুহ। গোটা দক্ষিণের মানুষ এই সেতুকে ঘিরে নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। এই বন্দর দিয়ে বছরে ভারতে ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও আট হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আমদানি ও রপ্তানি থেকে বন্দর ও কাস্টমস রাজস্ব আদায় করে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ফলে বেনাপোল এখন রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। এখন ভারত থেকে পণ্য আমদানির পর রাজধানীতে পৌঁছে যাবে ৪-৫ ঘণ্টায়। কমবে সময় ও পরিবহণ ব্যয়। এতে পুরো অর্থনীতির চাকাতেই নতুন গতি আসবে। কারণ, ভারত থেকে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানার কাঁচামাল আমদানি হয়; সেটি দ্রুত যেমন ফ্যাক্টরিতে পৌঁছাতে পারবে তেমনি তৈরি পণ্য রপ্তানিও দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে।

যশোরের সবজি জোনের সব কৃষকই আশায় বুক বেঁধেছেন; নতুন স্বপ্ন দেখছেন পদ্মা সেতু নিয়ে। তাঁদের ভাবনা, পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের কৃষিপণ্য বিপণনে নতুন বিপ্লব সাধিত হবে।

যশোরের চাঁচড়া দেশের অন্যতম মৎস্যপল্লি হিসেবে খ্যাত। দেশে মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ রেণুপোনা উৎপাদন হয় এখান থেকে। এখানে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০ প্রজাতির চার থেকে পাঁচ হাজার কেজি রেণুপোনা উৎপাদন করেন শতাধিক চাষি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা আসায় প্রতিদিন ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। মৎস্য সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বাড়বে তাদের ব্যবসার পরিধি, আমূল পরিবর্তন আসবে মৎস্যপল্লিতে। লাভবান হবেন মৎস্যচাষি, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সবাই। কমে যাবে ফেরিঘাটে আটকে থাকার ভোগান্তি, আর মাছের পোনা মরে যাওয়ায় হতাশায় চাষির অশ্রুপাতের দৃশ্য। রক্ষা মিলবে সিন্ডিকেট আর চাঁদাবাজির হাত থেকে। বাড়বে সরকারের রাজস্বও।

সবজি, মাছের মতো ফুলও যশোর ব্র্যান্ডিংয়ের অন্যতম উপকরণ। গদখালির ফুলের পরিচিত দেশজোড়া। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পূরণ করেন ঝিকরগাছা ও শার্শার ফুলচাষিরা। কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় ফুল পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে পদ্মা সেতু চালুর খবরে আনন্দের ঢেউ বইছে এই অঞ্চলের ফুলচাষিদের মাঝেও।

পদ্মা সেতু বেনাপোলের মতো দেশের ২১তম নৌ বন্দর যশোরের নওয়াপাড়াকেও নতুন প্রাণসঞ্চার করবে। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে নওয়াপাড়া বন্দরের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানিতেও।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মতিয়ার রহমান অতীতের স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, ঢাকা ছিল এই অঞ্চলের মানুষের জন্য দুর্গম পথ। বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যেত। শীতের মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মার দুপাড়ে শত শত যানবাহন এবং হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ দেখেছি। এ অঞ্চলের মেধাবীরা উন্নত সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেনি। সময়মতো পদ্মা পার হতে না পেরে ফেরিঘাটেই অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পদ্মা সেতু সেই দুঃসময়কে অতীতে ফেলে দেবে।

লেখক : শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক