ঈদ মোবারক
মানুষের ভালোবাসায় মানুষ বাঁচুক
আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ মোবারক।
দেশের উত্তর পূর্বকোণ সিলেট বলয়ে ভয়াবহ বন্যার ধকল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার আশীর্বাদ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ দুইয়ে মিলে এবারের আনন্দ-বেদনার ঈদ।
ঈদ এলেই মাওয়া, পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যে জনভোগান্তি তা লাঘব হয়েছে অনেকখানি। ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেটুকু ঘাটতি আছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সদিচ্ছুক ও দায়িত্বশীল হলে সেটাও অপূর্ণ থাকবে না।
মাসজুড়ে সিলেটের মানুষের কান্নায় ভারী থেকেছে ওই এলাকার আকাশ। দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মীদের দিনরাত শ্রমের পাশাপাশি বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ব্যক্তিও দারুণ ভূমিকা রেখেছেন।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুর সুবিধাভোগী ২১ জেলায় আজ অন্যরকম ঈদ। ঢাকায় থাকা এখানকার পরিবারগুলোর কর্মজীবী ঘরের মানুষেরা এবারই প্রথম স্বল্পসময়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছেন। ফেরি চরে আটকে যাওয়া কিংবা স্রোতের ঘূর্ণিতে বিপাকে পড়া এবং যানজটে নাকাল হওয়ার দিন শেষ হয়ে যাওয়াটা সবার জন্যই বড় স্বস্তির।
গেল মার্চে করা জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় সাত ধাপ এগিয়ে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৯৪ নম্বরে এসেছে বাংলাদেশ।
কোথাও নামছি, আবার কোথাও এগোচ্ছি; এমন উত্থান-পতন নিয়েই এগোচ্ছে আমাদের রোজকার দিনলিপি। অতৃপ্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলে আমরা নেমে যাই। আবার অল্পতে খুশি থাকার তুষ্টি থাকলে আমরা ভালো থাকি।
এমন ভালোমন্দের মিশেলেও আমরা ইতিবাচকতার জয়গান করব। সরকার সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়নের কথা বলছে, এটা সফল হলে দেশের বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য স্বস্তিকর সুখবর বয়ে আনবে।
করোনার মধ্যে আমাদের পোশাক কারখানাগুলোর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শুধু যে স্থিতিশীল রয়েছে তা-ই নয়, আমরা তৈরি পোশাক উৎপাদনের দিক সারা বিশ্বে ভিয়েতনামকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছি। এ খাতে ৪০ ভাগ পর্যন্ত আয় বেড়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষ কর্মীর অভাবের কথা জানিয়েছে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এই খাতের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য সরকার কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্যান্য ট্রেডের পাশাপাশি পোশাকশিল্পের জন্য আলাদা করে দক্ষ কর্মী তৈরিতে মনোনিবেশ করতে পারে। যারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশে গিয়ে বড় রেমিট্যান্স যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারবে।
কোভিড-১৯-এর দুর্গতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ সইতে গিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিরই টালমাটাল অবস্থা। এমন বাস্তবতাতে বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতিসহ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় দাম। নিম্নবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় সামলানো অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ সুসময় পার করছে। প্রথম বারের মতো পাঁচ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছে রপ্তানি খাত। বিশেষকরে তৈরি পোশাকের পর ৪টি খাত ১০০ কোটি ডলারের ধাপ পার করেছে। তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কথা বলতে পারছেন।
বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে এবং ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলে বাংলাদেশ এই লক্ষ্য পূরণেও আশাবাদী হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে আমাদের বাংলাদেশ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
তাই ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে অমৃতের খনি বলে আর কিছুই নেই। এতটুকু ঘৃণা নয়, আত্মত্যাগ হলো ভালোবাসার সুবর্ণ সোপান। মানুষের সেই সত্য ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সহৃদয়তায় সুন্দর মানুষ বাঁচুক।
লেখক : সাংবাদিক