রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত?

Looks like you've blocked notifications!

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযান ঘোষণার অল্প সময়ের মধ্যেই ইউক্রেনে রুশ সেনারা আক্রমণ শুরু করেছে। রাশিয়ান বাহিনীর বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। ইউক্রেনের সীমান্ত দিয়ে রুশ সেনারা ঢুকে পড়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় আরও রক্তপাত এড়াতে ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া স্পষ্টতই জানিয়েছে এই যুদ্ধে কেউ মধ্যস্থতা করতে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই দেশের বিরুদ্ধেও। এহেন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন এবং তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো কী পদক্ষেপ নেয় তাও দেখার বিষয়। অন্যদিকে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাবাহিনী এতে সম্মত না হয়ে যুদ্ধের ময়দানে নামলে ইউরোপে যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

পুতিনের নির্দেশে রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে সামরিক হামলার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে যথেষ্ট সমালোচনা তৈরি করেছে। আমরা জানি, দীর্ঘ দিন ধরে এই আক্রমণের আশঙ্কা বিরাজ করছিল। হামলার শুরুর পর তা ইতোমধ্যেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ইউরোপ থেকে এশিয়ায়। খবর পাওয়া যাচ্ছে, শেয়ার বাজারে দরপতন, তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ইউক্রেনের ওপর দিয়ে বেসামরিক ফ্লাইট পরিচালনায় ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক হতে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের আকাশসীমাকে সংঘাত কবলিত অঞ্চল হিসেবে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে।

এই মুহূর্তে আমি যখন এই লেখাটি তৈরি করছি, তখন এশিয়া থেকে ইউরোপের নেতারা হামলার সমালোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন, পাশাপাশি কিয়েভ ও ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।

আমরা জানি, হামলার আগেই একাধিক দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, ‘এই অন্ধকার সময়ে আমাদের ভাবনা ইউক্রেন ও নিষ্পাপ নারী, পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে রয়েছে। যারা বিনা প্ররোচনার এই হামলার শিকার এবং নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আর এই মুহূর্তে আমরা যখন শঙ্কা প্রকাশ করছি, তখনই সারা বিশ্ব রুশ-ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির ভয়াবহ ভবিষ্যতের আশঙ্কা শুরু হয়েছে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি  এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন তিনি।  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের শপথও করেছেন। উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আর্টিলারি আক্রমণের কবলে ইউক্রেন পড়লেও হামলার জবাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও গোলা ছুড়ছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।

রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত ইউক্রেনের সামরিক সদর দপ্তরে রাশিয়ার হামলার পর শহরটি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে বহু মানুষ। কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরের পাশাপাশি হামলা হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও। হামলার মুখে রাজধানী কিয়েভে জরুরি সাইরেন বাজায় কর্তৃপক্ষ। পরে আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে বহু মানুষ। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে মহাসড়কে পলায়নরত মানুষের গাড়ির জট দেখা যাচ্ছে।

জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ, তৎপরতার মুখে এ হামলা শুরু হলো। এ হামলার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বড় ধরনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ শুরু হলো। রাশিয়ার ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার হুমকিও এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বলয় থেকে। দীর্ঘদিন ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধপরিস্থিতির আগুন যে এবার দাউদাউ করেই জ্বলে উঠল তা বলা বাহুল্য। শেষকথা এভাবে বলা যায় যে, পুতিনের যুদ্ধ ঘোষণার পরই মূলত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাঁশি বেজে গিয়েছিল। এখন দেখার অপেক্ষার পালা, এর প্রভাব কত দূর গিয়ে পৌঁছায়।

লেখক :  সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়