শ্রম-শ্রমিক, করোনা, ক্রান্তিকাল

Looks like you've blocked notifications!

একবাড়ির মধ্যে যে রোগের বীজ একজনকে মেরে ফেলে, আর একজনকে তা স্পর্শ করে না—কেন বলতে পারো? কহিলাম, স্পর্শ হয়তো করে, কিন্তু যে সবল সে কাটিয়া ওঠে, যে দুর্বল সেই মারা যায়।’—কথোপকথনটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস থেকে নেওয়া। আজকের দিনে এ কথার প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নাতীত; বর্তমানে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ঝুঁকি থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তবে করোনার হাত ধরে আরো একটি রোগ আমাদের সমাজে বাসা বাঁধছে, তা হলো বেকারত্ব। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, করোনার কারণে আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। এর মধ্যে নিঃসন্দেহে বিরাট একটি অংশ শ্রমজীবী মানুষ। এটি আনুষ্ঠানিক খাতের কথা। কিন্তু আমাদের দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক, যাঁরা ইতিমধ্যে সংকটে। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু সংকটে পড়ছেন দুর্বলেরা। করোনা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর যে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার শিকার হবেন এই শ্রমজীবী মানুষ—শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর। এর সমাধান সঠিক নীতিমালা ও কৌশলের মাধ্যমে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় নিহিত। 

সদ্য গেল মহান মে দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আমাদের প্রত্যাশা বর্তমান সংকটকালে ও এর পরবর্তী অর্থনেতিক পরিস্থিতিতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে যেন এই শ্রমিক শ্রেণির, শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম মানবিক অধিকারটুকু নিশ্চিত করা হয়। আর দুর্ভিক্ষ যদি দেখাই দেয়, তবে এই শ্রমজীবী মানুষ যেন বাঁচার অধিকারটুকু না হারান। এজন্য নিশ্চিত করতে হবে সঠিক বণ্টন ও সরবরাহ ব্যবস্থা। কারণ দিনশেষে দুর্ভিক্ষের ছোবলের শিকার হবেন কিন্তু এই শ্রমিক, কৃষক আর খেটে-খাওয়া মানুষগুলো। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১১৭৬ বঙ্গাব্দ/১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ) বা পঞ্চাশের মন্বন্তর (১৩৫০ বঙ্গাব্দ/১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ) হয়েছিল ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণের কারণে। আজ আমরা নিজ দেশে যেন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি না হই।

আরেকটি কথা। করোনা একদিন শেষ হবে, অর্থনৈতিক মন্দাও কাটিয়ে উঠবে বিশ্ব। কিন্তু শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিকদের আর রাজপথে নামতে হবে না, সে নিশ্চয়তা কি আছে? শ্রমিকদের দুর্দশা কাটিয়ে ওঠার একটাই পথ, তা হলো শিক্ষা। আমাদের শ্রমিকদের অন্তত মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং তাঁদের কারিগরি বিদ্যায় দক্ষ করে তোলার মধ্যেই রয়েছে তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক মুক্তি। এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিকল্পনা; চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী কর্মীর পরিকল্পনা।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী