সৈয়দ সাহেব, আপনাকে ঈর্ষা করি

Looks like you've blocked notifications!

এই জীবনে ঈর্ষা করার মতো মানুষ খুব কমই সামনে এসেছে। যে এক-দুজন এসেছেন, মোস্তফা কামাল সৈয়দ তাঁদের একজন। বিটিভিতে তাঁর নির্মাণ যখন দেখেছি, তখন বোকাবাকশোটার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকার বয়স। ধীরে ধীরে তাঁর নির্মাণে মুগ্ধ হতে থাকি। হয়তো বুঝে, হয়তো না-বুঝে। নাটকে তাঁর নাম দেখে শ্রদ্ধা তৈরি হচ্ছিল। 

সামনে যাওয়ার প্রথম সুযোগ হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ভোরের কাগজে বিটিভির প্যাকেজ অনুষ্ঠান নির্মাণ নিয়ে একটা বড় লেখা লিখতে হয়েছিল। প্যাকেজ অনুষ্ঠান তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। বন্ধু তাজিন আহমেদ আর আমি বিটিভিতে যাই উনার সঙ্গে দেখা করতে। সাদা শার্ট আর ছাই রঙের জ্যাকেটের মানুষের মুখোমুখি হই আবার ২০১০ সালে। আমার সম্পাদিত মাধ্যমের জন্য সাক্ষাৎকার নিতে। তাঁর জীবনদর্শন বিমোহিত করেছে আমাকে। টিভি অনুষ্ঠানের মান, নাটকের সংলাপ, ভাষা, এফএম রেডিওর ভাষাবিকৃতি, সর্বোপরি মানুষের যাপিত জীবন থেকে গণমাধ্যমের দূরে সরে যাওয়া নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁর পর্যবেক্ষণে আক্ষেপ ছিল। তরুণদের নিয়ে তিনি অপার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বলেছিলেন তরুণদের অভিভাবকত্বের সংকটের কথা। বিজ্ঞাপনের কাছে অনুষ্ঠানের ভাবনার আত্মসমর্পণ নিয়েও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

সবচেয়ে বড় পাওয়া, উনার হাত দিয়ে এনটিভিতে আমার রচিত কয়েকটি নাটক প্রচারিত হয়। ‘রং বদলে যায়’ ছিল আমার লেখা প্রথম নাটক। উনার হাতে স্ক্রিপ্ট দেওয়ার দুঃসাহস আমার কোনোদিন হয়নি। পরিচালক, প্রযোজকরা নিয়ে গেছেন। ফোনে একদিন উনি শুধু বলেছিলেন, আপনি লিখুন নিয়মিত। নাটকের সূত্র ধরে আরো দুই-তিন দিন গিয়েছি তাঁর দপ্তরে। কিন্তু নাটক নিয়ে কথা বলেননি। কুশল বিনিময় ও সাম্প্রতিক নানা বিষয় উঠে এসেছে সংক্ষিপ্ত আলাপে। প্রতিবারই সঙ্গী হিসেবে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও প্রখ্যাত গীতিকার মুহাম্মদ মোজাক্কের ছিলেন। তিনিও ছেড়ে গেছেন আমাদের।

যখন থেকে নাটকে বিপণন বিভাগের প্রাধান্য তৈরি হয়, তখন থেকে আর নাটক লেখা হয়নি। ‘কাজলরেখা ও মাটির পুতুল’ নামক একটি নাটক এখনো এনটিভির কাছে রয়ে গেছে। বছর দুই আগের পহেলা বৈশাখে নাটকটি প্রচারের কথা ছিল। ওই দিন ধর্মীয় আরেকটি বিশেষ দিবস থাকাতে নাটকটি প্রচার হয়নি। এনটিভি থেকে বলা হয়েছিল পাত্র-পাত্রীর নাম বদলে দেওয়ার জন্য। আমি দেইনি। পরিচালক বলেছিলেন, কথা বলেন সৈয়দ সাহেবের সঙ্গে। আমি জানতাম প্রস্তাবটি তাঁর দিক থেকে আসেনি। আসতে পারে না। আসলে উনি নিজেই ফোন দিতেন। কোনো কিছু বদল করতে হলে আগে যেমনটি দিতেন। তাই ফোন করার দুঃসাহস দেখাইনি। কথাও হয়নি আর। তবে খোঁজ রেখেছি নিয়মিত। অফিসে যান কি না, স্বাস্থ্যের খবরাখবর। একজন মানুষের দাঁড়ানো, তাকানো, বসে থাকা, দূরাভাষে কথা বলার মধ্যে যে আভিজাত্য ও সাধারণের মিশেল, সেই ব্যক্তিত্বের ঈর্ষায় নিত্য দাহ হই। চলে গেলেন তাতে কী, আমি আপনাকে ঈর্ষা করবই।

লেখক : বার্তাপ্রধান, সময় টিভি