পদ্মা সেতু

স্বপ্নের সেতু ঘিরে নতুন উদ্যোক্তাদের চোখে আলোর ঝলক

Looks like you've blocked notifications!

অবশেষে এলো মাহেন্দ্রক্ষণ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে, চোখের সামনে। আর কিছুক্ষণের  মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল সকাল থেকে এর ওপর ঘুরবে পরিবহণের চাকা। পরিবর্তন হবে পদ্মাপাড়ের মানুষের ভাগ্যের চাকাও। উন্নয়নের জোয়ার বইবে। এর আশপাশ দিয়ে গড়ে উঠবে রিসোর্ট, স্যুটিং স্পট, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। যাতায়াত সুবিধার কারণে গ্রাম খুব সহজে যুক্ত হবে রাজধানীর সঙ্গে। চাঙা হবে নানান ব্যবসা। শরীয়তপুর জেলার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও তাই দেখছেন নানান স্বপ্ন। তৈরি করছেন পরিকল্পনা। বিসিক উদ্যোক্তাদের চোখেমুখে তাই দেখা মিলছে আলোর ঝলক।

দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের ২১ জেলাসহ পুরো দেশের স্বপ্নের দুয়ার পদ্মা সেতু। এই সেতুর কারণে শরীয়তপুরের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোক্তারা তাঁদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করতে শুরু করেছেন। নতুন উদ্যমে প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে বিভিন্ন পণ্যকে উৎপাদনমুখী করতে শুরু করেছেন। ফলে নতুন করে অনেক শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন এলাকার সুধীজনেরা।

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই আসবে আমূল পরিবর্তন। ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই সরবরাহ করতে পারবে ঢাকার বাজারসহ সারা দেশে। এতে খরচ ও সময় দুটিই সহজলভ্য হবে বলে আশা নগরীর সংশ্লিষ্টদের।

১৯৯৮ সালে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক উদ্যোগ নিয়ে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের প্রেমতলা নামক স্থানে প্রায় ১৪ একর জমির উপর এই শিল্পনগরীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জুলাই শিল্পনগরীর উদ্বোধন করা হয়। এই শিল্পনগরীতে মোট প্লট রয়েছে ১০০টি। এর মধ্যে ৪টি প্রশাসনিক ও বরাদ্দকৃত প্লট ৯৬টি। শিল্প ইউনিট রয়েছে ৫৯টি। উৎপাদনরত শিল্প ইউনিট সংখ্যা ৪২টি। উৎপাদনমুখী দুটি ও বন্ধ ইউনিট রয়েছে ৪টি। শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত ইউনিট রয়েছে ৯টি। শিল্পনগরীতে ২৩ বছরেও কাঙ্ক্ষিত কোনও উন্নয়ন হয়নি। দীর্ঘ ২৩ বছরে বিসিক শিল্প নগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার বিষয়টিকে পদ্মা নদী পারাপার ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বেশি দায়ী করেছেন উদ্যোক্তারা।

শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই খারাপ ছিল। শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৭৮ কিলোমিটার হলেও নদী পার হতে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। কখনও কখনও এক দিনেরও বেশি সময় কেটে যেত পদ্মা নদী পার হতে। এখন পদ্মা সেতুর বদৌলতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং বেড়ে যাবে অনেক গুরুত্ব শরীয়তপুরের এই শিল্পনগরীর। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকার বাজারসহ বিভিন্ন বাজারগুলোতে এখানকার পণ্য সরবরাহ করতে পারবে নগরীর ব্যবসায়ীরা।

শরীয়তপুর বিসিক শিল্প নগরীর উদ্যোক্তা তালুকদার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড অটো ফ্লাওয়ার মিলসের পরিচালক মো. জিন্নুরাইন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা ঢাকার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাচারে পূর্বের তুলনায় কম খরচ ও অল্প সময়ে আমাদের উৎপাদিত পণ্য সারা দেশে সরবরাহ করতে পারব বলে আশা করছি। যে কারণে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

শরীয়তপুর বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু খোলার পর শরীয়তপুর বিসিক শিল্প নগরী হবে দক্ষিণ অঞ্চলের বৃহত্তর শিল্প নগরী। এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে। ইতোপূর্বে ভারতসহ কয়েকটি দেশ শরীয়তপুর শিল্পনগরীতে শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন। একমাত্র পদ্মা সেতুর কারণেই শরীয়তপুরের মতো স্থানে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ হলে জেলার অনেক বেকার সমস্যার সমাধান হবে।’

শরীয়তপুরের বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা অর্ক সরকার বলেন, ‘পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার সংবাদের পর থেকে অনেক উদ্যোক্তা বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দের জন্য আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ইতোপূর্বে যাদের প্লট বরাদ্দ ছিল, তাদের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী শরীয়তপুরের বাজারে বাজারজাত করার মতো মালামাল তৈরি করত। এখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে এই ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে নতুন উদ্যোগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো শুরু করেছেন।’

লেখক : শরীয়তপুর প্রতিনিধি, এনটিভি