অভিযোগে আটকা আম আদমির ১০০ দিন : নলিন এস কোহলি

Looks like you've blocked notifications!

নলিন এস কোহলি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন মুখপাত্র এবং এই রাজনৈতিক দলটির ‘পাবলিক পলিসি রিসার্চ সেন্টার’-এর পরিচালক। একইসাথে তিনি একজন পেশাদার আইনজীবী। গণমাধ্যম ও শিক্ষা নিয়ে তিনি কাজ করেন। ভারতীয় রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টির সরকার গঠনের ১০০ দিন পেরোবার পর তাদের কথা আর কাজের সামঞ্জস্য-অসামঞ্জস্য নিয়ে যাচাই করেছেন তিনি। এই লেখা এনডিটিভির অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ মে প্রকাশিত হয়েছে।

নিয়তি মাঝেমধ্যে বিচিত্র খেয়ালে, ভিন্নভাবে পুরস্কার দেয়। আর তারপর, সবার নজর গিয়ে পড়ে কপাল খুলে যাওয়া লোকটির দিকে। সাথে এও দেখা হয়, এই সুযোগ পেয়ে সে কী করেছে।

বিশাল মাপের সমর্থন নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর আম আদমি পার্টি (এএপি) দিল্লির তিনটি ছাড়া সবকটি আসন পেয়েছেন। অ্যাসেম্বলিতে আসন রয়েছে ৭০টি, এর মধ্যে তিনটি আসন তেমন কিছু নয়। নির্বাচনের সময় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং প্রেক্ষাপট উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এএপি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নারীর নিরাপত্তার জন্য ১৫ লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ভর্তিসংকট দূর করতে ৫০০ নতুন স্কুল খোলা, ৯০০টি নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং দিল্লির হাসপাতালগুলোতে আরো ৩০ হাজার শয্যা সংযোজন।

সরকার ব্যবস্থায় এএপির ১০০ দিন এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে।ভর্তুকির সুবাদে পাওয়া পানি আর বিদ্যুতের অংশটুকু নিশ্চিত করা এর মধ্যে ছিল সহজতম অধ্যায়। তবে এ কাজে দরকারি যন্ত্রপাতি আর কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য তহবিল কোত্থেকে আসবে, সেটা কিন্তু পরিষ্কার নয়। আরেকটা প্রতিশ্রুতি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল, দিল্লির পথেঘাটে বিনা মূল্যে ওয়াই-ফাই সুবিধা। সেটাও এখন নিকট ভবিষ্যতে হওয়ার কথা। তবে তাতে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে, অলস তরুণ জনগোষ্ঠী রাস্তার আনাচে-কানাচে ফ্রিতে কতটা পর্নোছবি দেখতে পাবে- সেসব এখন বিবেচ্য বিষয়।

ভোটারদের একটি অংশ যে দারুণ খুশি তা নিয়ে সংশয় নেই। অন্যরা অবশ্য দ্বিধায় ভুগছেন যে, এসব প্রতিশ্রুতি কেবল ‘ভোট-বিপ্লব’ ঘটানোর জন্য ছিল; নাকি আদতেই এগুলো ঠিকঠাক বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে- তা নিয়ে! এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চাই সঠিক পরিকল্পনা, একইসাথে চাই নিরেট উদ্যোগ।

এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা একজন কেজরিওয়ালের জন্য সহজই ছিল। আর যাই হোক, তিনি ইন্ডিয়ান রেভিন্যু সার্ভিসের একজন সাবেক কর্মকর্তা, আবার একজন আইআইটি অ্যালামনাইও বটে! প্রথম ছয় মাসের সময়টুকু ধরা যাক সূচনাকাল হিসেবে। এরপর ধরা যাক ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য আরো ছয় মাস। তাহলে সব মিলিয়ে আম আদমি পার্টি সরকারের এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য হাতে ঠিক ৪৮ মাস বা চার বছর সময় রয়েছে।

১৫ লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা মানে প্রতি মাসে ৩১ হাজার ২৫০টি করে, কিংবা বলা যেতে পারে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে। একইসাথে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করার লোকও দরকার পড়বে এই বিশাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। সেইসাথে প্রতি মাসে ১০টি করে নতুন বিদ্যালয়, ১৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালে ৬২৫টি অতিরিক্ত বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে- যদি এএপি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চায়।

দিল্লিতে দুই লাখ শৌচাগার স্থাপন আর জমিজমা করায়ত্ত করা ছাড়াই প্রতিটি গ্রামে একটি করে বিদ্যালয় এবং হাসপাতালের বিষয়টি নিশ্চিত করাও কিন্তু কম বড় চ্যালেঞ্জ নয়।

এখন পর্যন্ত এসব বিশাল প্রতিশ্রুতি পালন করার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো যে বা যাদের আম আদমি পার্টি নিজেদের শত্রু বা প্রতিপক্ষ মনে করছে- তাদের বিরুদ্ধে একটানা বিরূপ মন্তব্য করে যাচ্ছে, অভিযোগ আনছে; কি পার্টির ভেতরে কি বাইরে! আর কাজের দিকে একদমই নজর নেই তাদের।

সবশেষ বিতর্ক হচ্ছে, কেন্দ্রের সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি বা পোস্টিংয়ের বিষয়টি কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করেন- তা নিয়ে। এ বিষয়ে বিভিন্ন বৈধ বক্তব্য আছে দুই পক্ষের জন্যই; লেফটেন্যান্ট গভর্নর আর অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। হয়তো এএপি এ বিষয়টির দফারফা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবে। স্টেট অ্যাসেম্বলিতে এ নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশনও বসেছে।

একইসাথে জনাব কেজরিওয়ালের আরেকটি বিষয় অবশ্যই ভুলে যাওয়া চলবে না- তিনিও কিন্তু আইএএস আর আইপিএস এর হাজার হাজার অফিসারকে বদলি করেছেন!

নিজেদের সীমার বাইরে গিয়ে যেটা মনে চাইছে সেই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মাতামাতি করছে ‘টিম কেজরিওয়াল’। সে যাহোক, এটা কিন্তু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে পিঠটান দেওয়ার বা পালানোর জন্য কার্যকরী কোনো পথ নয়! চাইলে তিনি নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছ থেকে কিছু শিক্ষাও নিতে পারেন, যারা বড় কিছু কাজ করে দেখিয়েছে। আট মাসেরও কম সময়ে ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধ্যান যোজনা’ বা ‘পিএমজেডিওয়াই’ প্রোগ্রামের আওতায় ১৫ কোটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে (এর মানে হচ্ছে প্রতিমাসে প্রায় দুই কোটি বা প্রতিদিন সোয়া ছয় লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে)।

মে মাসের ১০ তারিখে চালু হওয়ার পর থেকে সাত কোটিরও বেশি মানুষ ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি’ স্কিমের জন্য নিবন্ধন করেছেন। তৃতীয় স্কিম, ‘অটল পেনশন যোজনা’ও এগিয়ে চলছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা, সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও ঠিকঠাক এগিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। বেশি না হলেও এগুলো কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার ইতিমধ্যে অর্জন করতে পেরেছে।

বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সেটি পূরণে বিজেপি কী করেছে আর কী করেনি সেই বিচারও করা যাবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো অনুযায়ী তারা কতটুকু কাজ করতে পেরেছে, এ নিয়ে মেয়াদ শেষে জনতার মুখোমুখি হবে তারা। প্রশ্ন হলো, ‘টিম কেজরিওয়াল’ কি তাদের প্রতিশ্রুতি এবং কাজের সাপেক্ষে ‘যাচাই’ হওয়ার চ্যালেঞ্জটুকু নিতে পারবে?

দূর্ভাগ্যজনকভাবে ‘টিম কেজরিওয়াল’ এখন পর্যন্ত সুশাসন এবং সরকারি দায়িত্ব পালনের বদলে দ্বন্দ্ব আর অভিযোগ নিয়ে পড়ে আছে। এখানেই মনে করিয়ে দেওয়া যায় আব্রাহাম লিংকনের উক্তি-‘তুমি কিছু মানুষকে সব সময় বোকা বানাতে পারবে, সব মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারবে, কিন্তু সব মানুষকে কখনোই সব সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখতে পারবে না।’