ক্রিকেট

নিউজিল্যান্ডে কেমন খেলবে টাইগাররা?

Looks like you've blocked notifications!

অপরাজেয়! হয়তো না। তবে নিজের মাটিতে নিউজিল্যান্ড দুর্দান্ত। তারকা, মহাতারকা ছাড়াই তারা দারুণ এক টিম। গোটা কয়েক প্রজন্ম ঘাঁটলে দেখবেন, তারা জনাকয়েক মহান ব্যাটসম্যান পেয়েছে। অলরাউন্ডার পেয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরে নিউজিল্যান্ড কখনোই মহান টিম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু নিজের মাঠে? এককথায় প্রায় অপ্রতিরোধ্য!

নিজের মাঠে নিউজিল্যান্ড কেন এত ভালো? গড়পড়তা উত্তর, ঘরের মাঠে কে-ই বা খারাপ দল! তারপরও নিজেদের মাঠে নিউজিল্যান্ড কেন যেন একটু বেশি ভালো দল হয়ে ওঠে! তার বড় একটা কারণ, ওদের কন্ডিশন।

ক্রিকেটে কন্ডিশন বড় একটা ফ্যাক্টর। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন যেকোনো দলের জন্য কঠিন। সেটা ক্লাইভ লয়েডের অপ্রতিরোধ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে শুরু করে সর্বশেষ মিসবাহ-উল হকের পাকিস্তান। টের পেয়েছেন সবাই। তাহলে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন কেমন? ক্রিকেট বিজ্ঞজনরা অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দেবেন। তবে মোটাদাগে একটা কথা বলা যায় : নিউজল্যান্ড কন্ডিশন = অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশন + ইংলিশ কন্ডিশন। যেখানে বল সুইং করে। সিম, বাউন্স সবই মজুদ থাকে। টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড না হলে বোলারদের ওপর খবরদারি বা মাস্তানি করা কঠিন।

কিন্তু কঠিন পরিবেশে, কঠিন পরিস্থিতিতে, কঠিন কাজটা যিনি করতে পারবেন, তিনিই তো বড় ক্রিকেটার। তা তিনি ব্যাটসম্যান বা বোলার যা-ই হোন। বাংলাদেশ তো বেশ কিছু ভালো ক্রিকেটার নিয়েই নিউজিল্যান্ডে গেছে। বলা যায়, তাদের ইতিহাসের সেরা দল নিয়েই নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ। খেলোয়াড়দের অতীত পারফরম্যান্স, সাম্প্রতিক ফর্ম আর সাফল্য এবং নামের পাশে ম্যাচের সংখ্যা। সবকিছু মিলিয়ে যথেষ্ট ভালো একটা দল বাংলাদেশের। এর চেয়ে ভালো দল নিয়ে বাংলাদেশ আগে নিউজল্যান্ড সফর করেছে, এমন দাবি করার লোক খুব কমই পাবেন।

মাশরাফি-মুশফিক-সাকিব-তামিম। অভিজ্ঞ। প্রতিষ্ঠিত। সঙ্গে আছেন মুস্তাফিজের মতো সেনশেসন। সাব্বির রহমান, তাসকিনের মতো উঠতি তারকা। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন আবিষ্কার মেহেদি হাসান মিরাজ, যিনি একাই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে টেস্ট জিতিয়েছেন। এদের ঘিরে বাঙালি ভালো কিছু আশা করতেই পারে। করলে সেটা বাড়াবাড়ি এমন কথা এখন আর বলা যাবে না।

আর নিউজিল্যান্ড দলকে তাদের মাঠে কীভাবে সামলাতে হবে, সেই হদিস খোঁজার জন্য বাংলাদেশ তো কোচ হাথুরুসিংয়ের প্রবাস জীবনের শহর সিডনিতে একটা ছোটখাটো কন্ডিশনিং ক্যাম্প করে গেছে। প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে। তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের একটা ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ আছে। সফরকারী দল সফর শেষে প্রায়ই বলে, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। সময় লাগে। সফর শেষে বাংলাদেশ কী বলবে, সেই জ্যোতিষচর্চা নাই বা করলাম। টি-টোয়েন্টির জমানায় সারা পৃথিবী এখন ক্রিকেটারদের নিজস্ব ঘরবাড়ির মতো। বছরজুড়ে বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ খেলে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। সব উইকেটে খেলা শিখে ফেলছেন তাঁরা। ব্যতিক্রম বোধ হয় শুধু নিউজিল্যান্ডের উইকেট। তারপরও নিউজিল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা এই দলের অনেকেরই আছে। যথেষ্ট আছে। নিউজিল্যান্ডে সফল হওয়া ক্রিকেটারও দু-একজন আছেন এই দলে। ক্রিকেটজীবনে খুব পজিটিভ মানসিকতাসম্পন্ন লোকও দু-একজন আছে এই দলে। তাই সিরিজ শুরুর আগে আশার একটা সলতে জ্বালাতে অসুবিধা কোথায় বাঙালির?

অসুবিধা তার মানসিকতায়! সাফল্য-ব্যর্থতা সবকিছুতে তার আবেগটা বেশি। দল জিতলে উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা আকাশছোঁয়া। আর হারলে হাতাশাটাও চরমে! কিন্তু পেশাদার ক্রিকেট সার্কিট আপনার কাছে চায় নিখুঁত মাত্রাজ্ঞান। সে আপনি ক্রিকেটার হোন, ক্রিকেটকর্তা হোন কিংবা মিডিয়া হোন। বাংলাদেশ দলের জন্য সেই পেশাদারি মানসিকতারও বড় পরীক্ষা এবারের নিউজিল্যান্ড সফর।

পরীক্ষা! হ্যাঁ, বাংলাদেশ দলের অন্যতম সফল কোচ হাথুরুসিংহের টেকনিক্যাল মগজেরও। হ্যাডলির দেশে খেলতে যাওয়ার আগে সিডনিতে বাংলাদেশ দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পটা কতটা কাজে দিল, তারও একটা উত্তর পাওয়া যাবে। সেই উত্তরের জন্য দেশে আমরা কৌতূহলী হয়ে থাকলাম। 

নাকি সব কৌতূহলে জল ঢেলে দিয়ে সফর শেষে কেউ একজন বলবেন, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনই আমাদের জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াল!

তবে হ্যাঁ, বিশ্বকাপের সময় নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ যে কন্ডিশন আর উইকেট পেয়েছিল, সেটা পাবে না নিশ্চিত। তবে সঙ্গে পাবে বাঙালির শুভকামনা, যাদের আবেগপ্রবণ জীবনে ক্রিকেট থাকে বড় একটা অংশজুড়ে। তাদের কাছে ক্রিকেট মানে ৯টা-৫টার কর্মময় জীবনের চেয়ে বেশি কিছু। যে কারণে তাঁরা ঘুম জড়ানো চোখে ভোররাতে উঠে টিভি দেখবেন। কিংবা অফিস যাওয়ার পথে মোবাইলে নেট ব্রাউজ করবেন। দেখতে চাইবেন, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ কেমন খেলছে। পৃথিবীর একেবারে দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে একটু ভালো খবরের জন্য মুখিয়ে থাকবে বাংলাদেশের মানুষ।

লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভি।