মোদির ১২ স্লোগান বনাম বাস্তবতা

Looks like you've blocked notifications!
শশি থারুর থিরুভানাথাপুরম

ডক্টর শশি থারুর থিরুভানাথাপুরমে ভারতে দুই দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদের কার্যকরী কমিটির সভাপতি, ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি বই লিখেছেন। এনডিটিভির অনলাইন সংস্করণে এই লেখা প্রকাশিত হয়েছে গতকাল ২৭ মে। অনুবাদ করেছেন সামি আল মেহেদী

গণমাধ্যম এখন ‘উদযাপন’ উপলক্ষে মশগুল। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তাঁর শাসনামল নিয়ে আমি আগেই কথা বলেছি (ডিসেম্ব ২০১৪-এর সময় থেকে ধরলে), আর এখনো আমার যাচাইয়ে মোটেও মিহি-মসৃণ ভঙ্গিমায় কিছু বলার ইচ্ছা রাখি না। আমার দৃষ্টিকোণ সবার আগে থেকেই জানা, সুতরাং আমি পাঠকদের এ বিষয়ে আরো বাড়তি কিছু পড়ানোর পরিশ্রম করাতে চাই না। এর চেয়ে বরং সহজ কিছু নিয়ে বলি, মিস্টার মোদির শাসনামলের প্রতি মাসের হিসাবে একটি করে প্রতিশ্রুতি বা ‘মোদীয় স্লোগান’ বনাম বাস্তবতা নিয়ে।

স্লোগান ১. সবার আগে ভারত

বাস্তবতা- লোকসভায় একজন সদস্য হিসেবে মোদি যতক্ষণ বক্তব্য রেখেছেন তার চেয়ে ঢের বেশি সময় বক্তব্য রেখেছেন বিদেশি পার্লামেন্টে।

স্লোগান ২. কর নিয়ে আর নয় সন্ত্রাস

বাস্তবতা- সরকার নতুন নতুন কর বসিয়েছে, এতে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস একদম নড়বড়ে হয়ে গেছে। মে মাসের প্রথম দিকেই ৫৫ কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক তহবিল প্রত্যাহার করা হয়েছে।

স্লোগান ৩. দায়িত্বশীল সরকার

বাস্তবতা- ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত অর্থমূল্যের কর সংগ্রহ (দুই হাজার ২৮৮ কোটি রুপি) করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

স্লোগান ৪. ভারতেই বানাও

বাস্তবতা- নির্মাণ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা কোনো জায়গাতেই অর্জন করতে পারেনি।

স্লোগান ৫. তরুণদের জন্য কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করব

বাস্তবতা- প্রতি মাসে চাকরির বাজারে আসছে ১০ লাখ তরুণ। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুনে নতুন  চাকরি সৃষ্টি হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজারটি। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার।

স্লোগান ৬. ভারতীয় ব্যবসায় জোয়ার আসবে

বাস্তবতা- টানা ৫ম মাস ব্যবসায়ীদের রপ্তানির পরিমাণ কমেছে, এই হিসাব এপ্রিল পর্যন্ত। গত বছর ২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে এ বছরে রপ্তানির পরিমাণ ১৪ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে আমদানির পরিমাণ গেছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, সব মিলিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।

স্লোগান ৭. আমরাই গড়াব ভারত

বাস্তবতা- ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ইস্যুকৃত টেন্ডারের মোট অর্থমূল্য তিন লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। এই পরিমাণটি আগের বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ নিম্নগামী। এ কারণে রেলপথ, সড়কপথ, আবাসন প্রকল্প, পানি সরবরাহ ও সেচ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্লোগান ৮. আমরাই গড়াব নতুন সড়ক

বাস্তবতা- ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ (পিএমজিএসওয়াই) প্রকল্পটি বরাদ্দ পেয়েছে ১৪ হাজার ২৯১ কোটি রুপি। এর আগেই অনুমোদিত হয়ে গেছে যেসব রাস্তার কাজ, সেগুলো শেষ করতেই রাজ্য সরকারের আরো ৫৭ হাজার ২০৬ কোটি রুপি দরকার। কাজেই নতুন রাস্তার কথা বাদ রাখুন, আগের রাস্তাগুলোর এক-চতুর্থাংশের কাজও এই বরাদ্দকৃত অর্থে শেষ করা যাবে না!

স্লোগান ৯. জনসাধারণের নিরাপত্তা

বাস্তবতা-  জিডিপির মধ্যে সামাজিক খাতে খরচের পরিমাণ ২০১০ সাল থেকে এখনকার সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কমে গেছে। বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন এবং নারীর নিরাপত্তা নিয়ে বহু বড় বড় প্রতিশ্রুতি ছিল-যা পরে একদম উগ্রভাবে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

স্লোগান ১০. ‘জন ধন যোজনা’ প্রকল্প

বাস্তবতা- ‘জন ধন যোজনা’ প্রকল্পের আওতায় নতুন ৬০ শতাংশ অ্যাকাউন্টেই অর্থের পরিমাণ শূন্য!

স্লোগান ১১. সবার সাথে সবার চলা

বাস্তবতা- ভারতের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছ থেকে অবহেলা ও অপমানের শিকার হচ্ছে। বিজেপির সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কথাবার্তা ও আচরণ এমন হচ্ছে যা মানুষের সাথে আগে হয়নি-ওদিকে বিজেপি এ নিয়ে কিছুই বলছে না।

স্লোগান : আমাদের কয়লা বেচাকেনায় রেকর্ড পরিমাণ অর্থ আয় হবে।

বাস্তবতা- এই উপার্জন সম্ভব হবে যদি আগামী ৩০ বছর একদম অনুমিত হারে এবং সফলভাকে উৎপাদন সম্ভব হয়। এটা কেবলই একটা হিসাব করা অনুমান, তাও যা কি না অর্জিত হতে পারে ২০৪৫ সালে! এমন জিনিসের জন্য বাহবা চাওয়ার মতো ভাঁড়ামো অবশ্য কেবল শ্রী মোদিই করতে পারেন।

মতামত নিজের মতো দেওয়া গেলেও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মনগড়া কথা বলা যায় না। উপরে যা দেওয়া হয়েছে সেগুলো ‘ফ্যাক্ট’। এগুলো এমন কিছু ‘ফ্যাক্ট’ যা বদলানো যায় না, আর এগুলো নিয়ে শ্রী মোদির সমর্থকরা বড় বড় কথা বলেছিলেন। এমনভাবে চলতে থাকলে এই ফ্যাক্টগুলোই কিন্তু ‘আসল’ সময়ে ‘আসল’ কথা বলবে। কখন?  বুঝেছেন নিশ্চয়ই- ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময়!