পাঠক, বিদায় : অ্যালান রাসব্রিজার

Looks like you've blocked notifications!
অ্যালানের কর্মব্যস্ত এলোমেলো টেবিল। ১৯৯৫ সালের ছবি। ছবি : দ্য গার্ডিয়ান

২০টি বছর কাটিয়েছেন সম্পাদকের চেয়ারে। গার্ডিয়ানের মতো ডাকসাইটে পত্রিকার দায়িত্ব সামলানো কি চাট্টিখানি কথা? কিন্তু অ্যালান রাসব্রিজার এই লম্বা সময় ধরে দেখিয়েছেন গুরুদায়িত্ব কীভাবে উপভোগ করতে হয়! এই সময়ে গার্ডিয়ানও পেয়েছে নতুন রূপ, সংস্করণ, ঘটনা-ব্রডশিট থেকে বার্লিনার, এইটকেন থেকে স্নোডেন, নিউজপ্রিন্ট থেকে পিক্সেল, এবার রাসব্রিজারের অবসর। বিদায় বেলায় পাঠকদের জন্য লিখেছেন নিজের শেষ, এবং সুবিশাল এক সম্পাদকীয়। অ্যালানের বিদায়ে শ্রদ্ধা হিসেবে ভাবান্তর করা হয়েছে সম্পাদকীয়র অংশবিশেষ। 

সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সব সময় যেকোনো আঘাতের পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল গার্ডিয়ানের। গত ২০ বছরে এমন যেকোনো কিছুর বিরুদ্ধে গার্ডিয়ান একটা অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে পেরেছে- আর পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘটনা নেহাত কম ছিল না। তবে হ্যাঁ, একটা কথা, আমরা যা করেছি সবই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, কখনোই ব্যক্তিপর্যায়ে নয়।

কিন্তু একজন সম্পাদকের ক্ষমতা সব সময়ই আমার স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলেছে। আমার সম্পাদক জীবনের শুরুর দিকে একটা কাজ করেছি কাগজ সম্পাদনার ক্ষমতা নিয়ে। এটা আমি শুধু আমার হাতে আটকে রাখিনি। সাংবাদিকতা আমার কাছে ঠিক পরিপূর্ণ কোনো মাধ্যম নয়। কারণ এ কাজে কোনো না কোনো ভুল থাকবেই-এটাই স্বাভাবিক। এই কাজে কখনোই কেউ কারো ভুল সংশোধনের দায়িত্ব একা কাঁধে নিতে পারবে না।

ওয়াশিংটন পোস্টের ডেভিড ব্রোডারের ‘যেমন ঘটনা ঠিক, তেমন করে লেখা’র ধরন আমি কখনোই ভুলিনি। ব্রোডার একবার লিখেছিলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় আংশিক, অসম্পূর্ণ, অনিবার্য কিছু ঘটনা চট করে ঘটে গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি এমন কিছু লিখতে যাতে পক্ষপাত না হয় এবং জিনিসটি আপনাদের ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছায়। একই সঙ্গে, আপনারা যেন পুরো বিষয়টি এক ঘণ্টার মধ্যে পড়ে ফেলতে পারেন। কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়া আমরা যদি কাজটি ঠিকঠাক করতে পারি তাহলে বলা যায়, এ পরিস্থিতিতে আমাদের এটুকু করারই সাধ্য ছিল। আগামীকাল আবারও ফিরছি, সংশোধিত এবং পরিমার্জিত সংস্করণ নিয়ে।”

সেই ১৯৭৭ সাল থেকেই বিষয়টি এমন যে কেউ চাইলে পত্রিকার একজনের কাছে অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন, যে আবার সম্পাদকের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন, স্কট ট্রাস্ট ছাড়া। তাঁরা ভাবতে পারেন সম্পাদককে পাশ কাটিয়ে তাঁরা পত্রিকা সম্পর্কে সমালোচনা ও আমাদের দুর্বলতা নিয়ে কলাম লিখতে পারছেন এবং সেটা ছাপাও হচ্ছে কোনো কর্তন ছাড়া-এই গার্ডিয়ানের হলোটা কি? তাঁদের এই ভাবনায় আমি বাগড়া দিতে চাই না। 

যুক্তরাষ্ট্রের পত্রপত্রিকা বা অন্য অনেক জায়গায় এটা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু যুক্তরাজ্যে এখনো নয়। এটার কারণ আছে। আপনি যদি সম্পাদক হিসেবে সব কড়া সমালোচনাকে গ্রহণ করেন, তাহলে আলাদা করে একজন বিচারক নিয়োগের কোনো মানে নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে আমি অন্যদের আরো বেশি ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছি। এটা করেছি একটা বিশেষ সম্পাদকীয় পর্ষদ তৈরি করে। এই বোর্ড মন্তব্যের অংশ এবং বিশেষ কলামগুলোর দিকে নজর রাখবে। আমরা ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করিনি। ধরুন ওয়াশিংটন পোস্ট বা নিউ ইয়র্ক টাইমসের কথা- সেখানে মতামতের পাতা নিয়ে নির্বাহী সম্পাদকের কোনো কিছু বলার থাকে না। আমি পুরো গার্ডিয়ানেরই সম্পাদক থেকে গেছি। কিন্তু চেয়েছি যে সংবাদ আর মন্তব্যের মাঝে পরিষ্কার একটা বিভাজন তৈরি হোক। একই সঙ্গে সম্পাদকীয় পর্ষদকে নিজেদের মতো করে কাজ করার সময় এবং ভাবার ফুরসতটুকু করে দিয়েছি।

আগামী সপ্তায়, গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি সংবাদের গোলযোগ থেকে মুক্ত! গার্ডিয়ান এখন ভালো অবস্থায় আছে। এর প্রসার, প্রভাব ও প্রচার এখন যেকোনো সময়ের থেকেও ভালো।

দারুণ সব সহকর্মী পেয়েছি আমি, খুবই মিস করব ওদের। কয়েকজনের নাম না বললেই নয়। ক্যাথেরিন ভিনার এই পত্রিকার অসাধারণ একজন সম্পাদক হতে যাচ্ছে (একাদশ বা দ্বাদশ)। আর আমি আগামী বছর স্কট ট্রাস্টের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছি, এটা ছিল আমার জন্য একেবারে স্বপ্নের মতো একটি বিষয়।

সহকর্মীদের সবাইকেই বিদায় জানাব, কথা বলব আলাদাভাবে। কিন্তু আমার প্রিয় পাঠকদের বলব, দয়া করে এটিকে, এই লেখাকে মনে করে নিন আপনাদের প্রতি আমার বিদায়ী শ্রদ্ধা হিসেবে। বিগত অনেকগুলো বছর আপনারা যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছেন, যোগাযোগ করেছেন, সাড়া দিয়েছেন এবং যুক্তিতর্ক করেছেন, সে জন্য। আমি জানি আপনাদের অনেকেই হয়তো এখন নিজেও এই ‘গার্ডিয়ান’-এর একজন সদস্য। বেঁচে থাকা আর শারীরিক কার্যক্রমের বাইরে আরো কিছুর জন্যই তো পত্রিকা খোলা!

আমি দেখেছি কিছু একাগ্র এবং পুরনো পাঠক নিজেদের পরিচয় দেন সম্পাদকের নাম বা সময়সীমা দিয়ে; যেমন ধরুন- ‘আমি ওয়েডসওর্থ থেকে ধরেছিলাম’ কিংবা কেউ বলবেন, ‘হিদেরিংটনের সময় থেকে আমি পড়ছি’।

কিন্তু শেষপর্যন্ত আমরা, সম্পাদকরা কেবল চলেই যাই। আমরা সবাই জানি যে আপনারা, পাঠকরাই আসলে অগ্নিশিখাকে ধারণ করে।