ক্রিকেট

স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকবে ওয়েলিংটন

Looks like you've blocked notifications!

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে বা টি-টোয়েনটিতে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বৈরী আবহাওয়ায় ক্রিকেটের এমন ফলাফল নতুন নয়। যেভাবে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে খেলতে এসে টাইগারদের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হয়, অনুরূপভাবে আমরাও হই একই পথের পথিক। কিন্তু অনুশীলন, আত্মবিশ্বাস আর দক্ষতার যুগলবন্দি খেলাটাকে নিয়ে যেতে পারে অত্যুঙ্গ এক উচ্চতায়। যেখানে দেশি-বিদেশি কন্ডিশন বা অচেনা মাঠের ব্যারিয়ারটাকে টপকানো যায় স্বচ্ছন্দে সাবলীলভাবে। এমনটাই আমরা দেখলাম গেল দু’দিনের ওয়েলিংটন টেস্টে। দুইদিন টানা ব্যাট করে ৭ ইউকেট হারিয়ে সাড়ে ৫ শতাধিক রান টাইগারদের উজ্জীবিত করবে অবশ্যই।

খেলা মানে শেষ পর্যন্ত হারজিতের পরিসংখ্যান। এটা চিরন্তন। কিন্তু হারাটাও যদি হয় সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করে তবে তা হয় গৌরবের। আর আমরা বাংলা ক্রিকেটভক্তরাও বরাবর মন ও মননে এই প্রতীতি পোষণ করি যে, হারি জিতি বাংলাদেশ।

নিউজিল্যান্ডের যে মাঠটিতে খেলা হচ্ছে, বলা হচ্ছিল সেটি বাতাসের শহর। আর বাতাসকে ব্যবহার করে বলের জাদু দেখিয়ে টাইগারদের কুপোকাত করবে বলে হুঙ্কার দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে কথাটা কাজের কাজ হিসেবে দেখা যায়নি। ফলে এই টেস্টে টাইগাররা চালকের আসনে বসছে বলেই সবাই ধারণা করছেন।

এরই মধ্যে ওই মাঠে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার সেরা ২১৭ রান এবং মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কোচিত ১৫৯ রান মিলে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের নান্দনিক জুটির দেখা পেয়েছি আমরা। ২৭৬ বলে ২১৭ রান করেন সাকিব। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড এখন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারেরই। ২০১৫ সালের এপ্রিলে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের ২০৬ রান ছিল আগের সেরা।

টেস্ট ইতিহাসে সাকিব-তামিমের জুটি পঞ্চম উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ৪০৫ রান নিয়ে ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর থেকে রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যান ও সিডনি বার্নসের। সাকিব-মুশফিকের এবারের জুটিটাই নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের সেরা। এমনকি বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটাই। পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ১৯৯৪ সালে এই মাঠেই ইনজামাম-উল-হক ও সেলিম মালিকের ২৫৮। তার চেয়ে ১০১ রান বেশি করেছেন সাকিব-মুশফিক। তামিম ও ইমরুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় জুটি হিসেবে টেস্টে দুই হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন সাকিব-মুশফিক। দেশের বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ গড়েছে বাংলাদেশ। ওয়েলিংটনের চেয়ে বেশি রান আছে কেবল শ্রীলঙ্কার গলে। ২০১৩ সালে ৬৩৮ রান করেছিল অতিথিরা।

টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে হাবিবুল বাশার ও তামিমের সাথে তিন হাজারি এলিট ক্লাবে এখন সাকিব আল হাসানও। ওয়েলিংটন টেস্টের মাত্র দুদিনের খেলায় বাংলাব্যাঘ্ররা পেয়ে গেল অনেক অনন্য রেকর্ড। যা তাদের সামনে আরো এগিয়ে নিতে দারুণ প্রেরণা দেবে অবশ্যই।

ওয়ান ডে ও টি-টোয়েনটির পর নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ক্রিকেট খেলাটা আমাদের টাইগারদের জন্য মনে হচ্ছিল বিরাট কষ্টসাধ্য। কিন্তু ওয়েলিংটনের প্রথম টেস্টে সেই সাকিব মুশফিকরাই নিজেদের বসিয়ে দিচ্ছেন চালকের আসনে। ট্রেন্ট বোল্ট বা টিম সাউদিদের মতো বিশ্ববিখ্যাত বোলারদেরও তাকিয়ে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় থাকছে না। আমাদের ক্রিকেটারদের বেশকিছু মাইলফলক স্পর্শ করা আর রেকর্ড বুকে নাম লেখানোর দিনে মাঠের দর্শক, ধারাভাষ্যকার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতো আমরা দেশি ক্রিকেট অনুরাগীরাও বেশ আপ্লুত।

টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করবার পর উদযাপনে আমাদের সাকিব ছিলেন বিস্ময়করভাবে ধিরস্থির। এমন স্থিরতা ফিরে আসুক সব খেলোয়াড়ের ব্যাটবলের নৈপূণ্যতায়। দেশের হয়ে সাকিবের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হতে অধিনায়ক মুশফিক যেমন যথার্থ সঙ্গ দিয়েছেন তেমন টিম স্পিরিট ছড়িয়ে পড়ুক আর সবার মাঝে। আমরা যেন নিন্দুকেরে ভালোবেসে জবাবটা দিতে পারি খেলার কুশলতায়। বাংলাদেশের পক্ষে হাওয়া বয়ে চলা নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন হয়ে উঠুক না আমাদের টেস্ট মর্যাদার সুবর্ণভূমি।

অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্টের অন্যরা মিলে নিশ্চয় পরিকল্পনা করবেন ওয়েলিংটনে আরো ভালো কিছুর প্রাপ্যতায় আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদাটাকে আরো শাণিত করবার পদ্ধতিটা আসলে কী হবে? সাকিব, মুশফিক বা মুমিনুলের মতো আমাদের বোলাররাও নিশ্চয় অবিস্মরণীয় ম্যাজিকটা দেখাতে পারবেন? ইয়ংস্টার তাসকিনের ক্রিকেট অভিষেকটা যদি আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে? তা দেখবার জন্য এই ম্যাচের শেষ দৃশ্য পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। আমাদের প্রাণান্ত শুভকামনা থাকল বাংলা স্কোয়াডের জন্য। আপাতত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গীতসুধা তোলা থাক আমাদের বীর ক্রিকেটারদের জন্য-   

“কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।”

 

লেখক : সংবাদকর্মী , মাছরাঙা টেলিভিশন