পাঠকের কলাম

স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন খাদিজা

Looks like you've blocked notifications!

সিলেট শহর থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক ধরে একটু এগোলেই শহরতলির আউশা গ্রাম। এই গ্রামের সেই কিশোরী মেয়েটির কথা মনে আছে কি? জীবনযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া এই কিশোরীর নাম নার্গিস আক্তার খাদিজা। প্রায় উন্মাদ বদরুলের চাপাতির আঘাতে জীবনাবসান হতে যাওয়া সেই মেয়েটি এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে। মাথা উঁচু করে জীবনের কাছে নতুনভাবে ফিরতে শুরু করেছে খাদিজা আক্তার নার্গিস। খাদিজাকে আঘাত করা বদরুল এখন শ্রীঘরে। 

অন্যদিকে কিছুদিন আগেও যে খাদিজার বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় ছিল, তিনি আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছেন। চাপাতির আঘাতে যাঁর জীবনে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না, সেই খাদিজা এখন পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে বের হচ্ছেন। চিকিৎসার অংশ হিসেবেই তাঁর ঘুরতে বের হওয়া। তারপরও ঘুরতে বের হওয়ার পর ভাইয়ের সঙ্গে তোলা ছবির এই মেয়েটির মিষ্টি হাসিতে হাসছে পুরো বাংলাদেশ।

ঘটনার পর থেকে খাদিজা আক্তার নার্গিস ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জীবনের অনেক সংকটকাল অতিক্রম করে অবশেষে তাঁর শারীরিক উন্নতির দেখা মিললে কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাভারের সিআরপিতে স্থানান্তর করে। সেখানে খাদিজার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর এখন তিনি আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে তিনি পূর্ণাঙ্গ সুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরবেন। খাদিজার সবজি বাগান করার শখ ছিল! গ্রামে বাড়ির পাশে ছোট জায়গায় চলত তাঁর সবজি চাষ। গ্রামে ফিরে খাদিজা হয়তো আবার সবজি চাষও করবেন! খাদিজা আবার গ্রামের দুরন্ত শিশুদের সঙ্গে দুষ্টুমিতে মাতবেন। গ্রামের মেঠোপথ ধরে আবার সে কলেজের পথ ধরবেন।

খাদিজার বাড়িতে পড়ে থাকা খালি পড়ার টেবিলটা আর ফাঁকা পড়ে থাকবে না। তিনি নিজেও পড়াশোনায় ফিরতে আগ্রহী। সিলেট মহিলা কলেজের এই ছাত্রী আবার ক্যাম্পাসে দেখার চেয়ে ভালো লাগার আর কী হতে পারে? তাঁর সহপাঠী, যাঁরা খাদিজার ওপর হামলার পর আন্দোলনে রাজপথ অচল করেছিলেন, তাঁদের কাছে খাদিজার ফিরে আসাটা হবে আনন্দের। সুধী মহলও চেয়ে আছে খাদিজার প্রত্যাবর্তনের দিকে। জীবনের পথে আরো একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক খাদিজা, মৃত্যুঞ্জয়ী নারী হিসেবে। 

গত অক্টোবরের ৩ তারিখে সিলেট এমসি কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পর খাদিজা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইমরান নামের অচেনা এক যুবকের চেষ্টায় সেদিন তাঁকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরের দিন খাদিজাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে খাদিজাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তা খুলে ফেলা হয়। কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের পর খাদিজা শঙ্কামুক্ত হয়। সবশেষ তাঁকে পর্যবেক্ষণের জন্য সাভারের সিআরপিতে দেওয়া হয়। সেখানে চলছে তাঁর চিকিৎসা। চিকিৎসকদের ধারণা, অচিরেই খাদিজা সুস্থ হয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। তাঁর ফেরার পথ চেয়ে আছে পুরো দেশবাসী। সবার আশা, খাদিজা সুস্থ হয়ে ফিরে সমাজকে বার্তা দিয়ে যাক; বদরুলের মতো  কাপুরুষরা সব সময় পরাজিত। আর সময় সাহসী মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়। সমাজে সকল স্তরে পশুত্ব বিলীন হয়ে মানবিকতার উন্মেষ হোক, সেই প্রত্যাশা।

লেখক : এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধি, শাবিপ্রবি (সিলেট)।