সাংবাদিকদের নিরাপত্তা

ক্ষমা করবেন শিমুল

Looks like you've blocked notifications!

ছোটবেলায়  বাবাকে হারান আব্দুল হাকিম শিমুল। শিমুলের মাথার ওপর ছায়া হয়ে ছিলেন নানি রোকেয়া বেগম। খেয়ে না খেয়ে নাতির পড়াশোনার খরচ দেন। বসতভিটা থেকে চার শতক জমি আদরের নাতির নামে লিখে দেন। এতিম শিমুল ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করে যোগ দেন সাংবাদিকতায়। একটি জাতীয় পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনে শিমুল রাত-বিরাত ছুটে বেড়ান। গভীর রাতে বাসায় ফিরে নানির আদর মাখা বকুনি খান। আর কোনো দিন রাত করে ফিরবেন না বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েন। একদিন এই শিমুলের হাত দিয়ে লেখা হয় পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে হালিমুল হক মিরুর বিজয় গাথা।

স্বজনদের অভিযোগ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই হালিমুল হক মিরুর ছোড়া গুলিতে জীবনের মতো থেমে যায় সাংবাদিক শিমুলের কলম। আহত শিমুল মারা যান গতকাল শুক্রবার। কী আশ্চার্য! যেই মানুষটা সকালে বের হয়েছিলেন সংবাদ সংগ্রহ করতে সেই মানুষটা এক  মিনিটের ব্যবধানে হয়ে গেলেন সংবাদ! এরইমধ্যে অবশ্য নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী নুরুন নাহার বেগম গতকাল শুক্রবার শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে মেয়র হালিমুল হক, তাঁর দুই ভাই সহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। (সূত্র : প্রথম আলো, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)

ঘটনাটা এখানে থেমে গেলেই পারত। থামেনি। থামবে কী করে? যে রোকেয়া বেগম ৪৭ বছর আগে আতুর ঘরে এই শিমুলের প্রথম কান্না শুনেছিলেন সেই নানির কাছেই খবর এলো তার আদরের নাতি আর নেই। কিন্তু নাতির মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাঁচতে পারলেন না নানি। পুত্রসম নাতির শোকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনিও।

এক গুলিতে দুটি প্রাণ ঝরে গেল কত সহজে। নিহত শিমুলের আইডি কার্ড ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। রক্তের দাগ কেমন বাংলাদেশের মানচিত্রের রূপ ধারণ করেছে। হতে পারে এটা নিতান্তই কাকতালীয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে শিমুলের আইডি কার্ড বুঝিয়ে দিচ্ছে গোটা দেশ আজ রক্তাক্ত। কয়েকদিন আগে ঢাকায় সাংবাদিকদের নির্দয়ভাবে পেটায় পুলিশ। কাল গুলি করে মারা হলো সাংবাদিককে। সাংবাদিকদের অবস্থা এখন রেসলিংয়ের রেফারির মতো। দুই দলই রেফারিকে পেটায়।

শিমুলের হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন হচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে, হত্যাকারীকে ধরবে কে? যারা ধরবে তারাই তো সাংবাদিক পেটানোয় সিদ্ধহস্ত।

গতকাল হোমপেজে শিমুলের আইডি কার্ডের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। যেই দীর্ঘশ্বাসের মানে, বড় ভুল সময়ে ভুল পেশা বেছে নিয়েছিলেন শিমুল ভাই। ক্ষমা করবেন।

লেখক : সাংবাদিক