শততম টেস্ট

বাঘের কাছে সিংহ বধ

Looks like you've blocked notifications!

হা-ডু-ডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও কালের বিবর্তনে ক্রিকেট বাংলাদেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের খেলা হলেই শত বাধা, রোদ-বৃষ্টি সবকিছু উপেক্ষা করে ভরপুর গ্যালারি তা-ই প্রমাণ করে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম টেস্ট প্লেয়িং দেশ পাকিস্তানকে হারানোর মধ্য দিয়ে ।

এরপর একে একে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ সব দেশকে হারায় বাংলার টাইগাররা। কিন্তু এসব অভাবনীয় সাফল্য  কেবল  ওয়ানডেতে পরিলক্ষিত হয়েছে। টেস্টে টাইগারদের জয়ের রথ যেন কচ্ছপের গতিতে এগুচ্ছিল। কেননা, টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম জয় পেতে খেলতে হয়েছে ৩৫ ম্যাচ!  ২০০০ সাল থেকে শুরু ২০১৭ সাল পর্ষন্ত বাংলাদেশ ১০০টা টেস্ট খেলেছে কিন্তু জয় কেবল চারটি টেস্ট দলের বিপক্ষে। তাও দুর্বল জিম্বাবুয়ের আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এসেছে এসব জয়!  তাই  বলতে গেলে বলা যায় বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এই জয়ের পর্বে যে আটটি ম্যাচ জিতেছে তার মধ্যে পাঁচটি জিতেছে দুর্বল জিম্বাবুয়ের আর দুটি জিতেছে  দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে!

কেবল ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিজয় ছাড়া বলতে গেলে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে আর দলীয় অর্জন তেমন কিছু নেই। ব্যক্তিগত অর্জন অবশ্য অনেকই রয়েছে। তাই শ্রীলংকার বিপক্ষে এই জয় বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের বদনাম কিছুটা হলেও ঘোঁচাতে পারবে।

টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম জয় পেতে খেলতে হয়েছে ৩৫ ম্যাচ আর পরবর্তী ৬৫ টেস্টে বাংলাদেশ পেয়েছে ৯টি জয়।  যা সত্যিই ক্রমান্বয়ে উন্নতির লক্ষণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। কেননা, এই অবস্থানে থেকে নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছে মাত্র ৭টি।

টেস্ট প্লেয়িং দেশ রয়েছে ১০টি। কিন্তু শততম ম্যাচে জয় নিয়ে স্মরণীয়  করে রাখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ ছাড়া আর কেবল তিনটি দেশের রয়েছে। ১৯১২ সালে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, ১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, এবং ১৯৭৯ সালে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পায়। তবে ডায়েরিতে কিংবা ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক জয়ের রেকর্ডে এবার নাম লেখাল বাংলাদেশ । এই হিসেবে ১৯ মার্চ ২০১৭ সাল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন।

যাই হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে বাংলাদেশের খেলা সেখানেই সব দল, মত  নির্বিশেষে সবাই খেলা দেখে আর প্রার্থনায় মত্ত থাকে জয়ের প্রত্যাশায়। আর জয়ের মধ্যদিয়ে সব বিভেদ ভুলে আবার বিজয় মিছিলে সত্যিকার বাংলাদেশের ঐক্যই পরিলক্ষিত হয়। মনে হয় বাংলাদেশে নেই কোনো বিভেদ হানাহানি, কিংবা রেষারেষি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্ষন্ত মাত্র ১০০ টেস্ট যেকোনো দেশের জন্য কম বলে গণ্য হয় তাই আগামীতে বাংলাদেশ আরো বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে একইসঙ্গে  বাংলাদেশ তার স্বভাবসুলব খেলা খেলে আগামীতে দেশে ও দেশের বাইরে আরো বেশি বেশি জয় উপহার দেবে এই প্রত্যাশা সবার । বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর যেমনি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে স্বরণীয় হয়ে আছে তেমনি ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশে ডায়েরিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক : প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, ফেনী সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজ