এক্সট্রা কাভার

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দুই ‘আ’!

Looks like you've blocked notifications!

  ড্রোন নিয়ে বিব্রত সাউথ আফ্রিকা! নিজেদের প্র্যাকটিসের সময় মিরপুরের আকাশে ড্রোন উড়িয়েছে তারা। এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা আছে বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন ওড়ানোতে। কঠোর এই আইন ভেঙেই বাংলাদেশের আকাশ সীমায় সাউথ আফ্রিকা ড্রোন উড়িয়েছিল  প্রথম প্র্যাকটিস সেশনে। এর জন্য বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশও করেছে সাউথ আফ্রিকা টিম ম্যানেজমেন্ট। ড্রোনকাণ্ড আপাত ওখানেই শেষ। আকাশে  আর ড্রোন ওড়াবে না সাউথ আফ্রিকার এটা ঠিক। কিন্তু মাঠে? বাইশ গজে আইন মেনে যে যে ‘হামলা’ চালানো সম্ভব তার সব কিছুই তারা করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আপাতত ‘স্টেইনগান’নেই সাউথ আফ্রিকার। কিন্তু মিসাইল, রকেট লঞ্চার- এসব কিছুর ব্যবহার দেখা যেতে পারে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার ডেইল স্টেইন খেলছেন না বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে নিজের শক্তি-সামর্থ্য নষ্ট করতে চান না ডেইল স্টেইন! তাই স্বেচ্ছাবিশ্রামে সাউথ আফ্রিকান এই ফাস্ট বোলার! সাউথ আফ্রিকা অবশ্য স্টেইনকে বিশ্রামে রেখেই বিধস্ত করতে চাইবে বাংলাদেশকে। মর্নি মর্কেল -অ্যাবোটরা থাকছেন। স্টেইনের অভাব ডেকে দিতে চাইবেন তাঁরা। সাউথ আফ্রিকানরা নিজেরাও জানেন বাংলাদেশ সফরে তাদের সমস্যা হতে পারে কন্ডিশন। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে ডুমিনি অবশ্য স্বীকারও করেছেন সেটা। আবার একমাত্র প্র্যাকটিস ম্যাচে সেটাকে ভুল প্রমাণের চেষ্টাও করে গেলেন সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটাররা। বিসিবি একাদশকে এক রকম উড়িয়েই দিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে একটা বার্তাও দিয়ে রাখলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে  অতীতের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সবকিছুই করবে তারা।

কিন্তু অতীত, সে তো ইতিহাস। আর এই ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি ভাবতে নারাজ বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে! আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাউথ আফ্রিকা কি করেছে তা নিয়ে নিজের ভাবনার কোনো কারণ তিনি দেখছেন না। বাংলাদেশ কোচ ভাবছেন সাউথ আফ্রিকার বিপেক্ষ তাঁর দল কী করতে পারবে তা নিয়ে। কোনো সন্দেহ নেই বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকে বাংলাদেশ খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। সেই ভালো ক্রিকেটের ফল- ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়। কিন্তু সেগুলোও এখন ইতিহাস। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশকে খেলতে হবে সাউথ আফ্রিকা নামের একটা দলের বিপক্ষে। ওয়ানডেতে যাদের বিপক্ষে সাফল্য বলতে এখন পর্যন্ত  একটা মাত্র জয়। তাও আট বছর আগে বিশ্বকাপের সুপার এইটে। গায়ানার সেই ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুল নামের এক ব্যাটসম্যান ৮৩ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে হারিয়েছিলেন গ্রায়েম স্মিথের দলকে। ১৪ ম্যাচে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জয় ওই একটাই। কিন্তু জয়ের ঘরে সংখ্যাটাকে বাড়িয়ে নিতে এবারই সবচেয়ে ভালো অবস্থায় বাংলাদেশ। কারণ, দারুণ ছন্দে মাশরাফি-সাকিব-সৌম্য-সাব্বিররা। খেলাটা নিজেদের মাঠে। চেনাজানা পরিবেশ। নতুন করে মানিয়ে নেওয়ার কিছু নেই বাংলাদেশের জন্য। বরং মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা  কাজ করছে সাউথ আফ্রিকানদের মাথায়। অবশ্য তাদেরও বা মানিয়ে নেওয়ার কী আছে! পেশাদার ক্রিকেটারদের কাছে মানিয়ে নেওয়া বড় কোনো বিষয় নয় এখন। কারণ, বছরজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলছেন তাঁরা। সাউথ আফ্রিকা দলটা হয়তো বিশ্বকাপের পর আর সিরিজ খেলেনি। কিন্তু এই উপমহাদেশে আইপিএলে খেলেছেন তাদের বেশির ভাগ ক্রিকেটার। এবি ডি- ভিলিয়ার্স-মর্কেল-মিলার-অ্যাবোট-ডুমিনি-ইমরান তাহির আইপিএলের আঁচ লেগেছে এদের প্রত্যেকের গায়ে। ঢাকা-চট্টগ্রামের তাপ এদের জন্য এখন আর কোনো সমস্যা নয়। আবার বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ ঘরের মাঠে যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছে পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে তাতে সাউথ আফ্রিকাও বাড়তি সতর্ক মাশরাফি-মোস্তাফিজ-তামিম-সাকিবদের নিয়ে। বরং উল্টো ভয় বাংলাদেশকে নিয়ে! ভালো ক্রিকেট খেলছি, এই ‘আত্মতুষ্টি’র ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়ে পড়ে বাংলাদেশ! আত্মতুষ্টির চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকাও নয় বাংলাদেশের জন্য। সাবধানতা, সর্তকতা  নামে যদি কোন অ্যান্টিভাইরাস থাকে তার ব্যবহার  দরকার বাংলাদেশ দলে আত্মতুষ্টি নামক ভাইরাসের আক্রমণ রোধে!

ড্রোন নয়। স্টেইনগান নয়। রকেট লঞ্চার নয়। মিসাইলও নয়। এমনকি মাঠের তিনশ ষাট ডিগ্রি জুড়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবও নয়, বাংলাদেশ নীরবে বিধস্ত হতে পারে বাঙালির বাড়াবাড়ি রকম ‘আবেগ’আর ‘আত্মতুষ্টি’নামক ভাইরাসে!

লেখক : সাংবাদিক