হাসতে মানা
যানজট জিন্দাবাদ
সেলিনা খালা ঈদ উপলক্ষে শপিংয়ে যাবেন। এবার দেশেই শপিং করবেন। উপায় নেই, আমাদের খালু ঘুষের জায়গা থেকে বদলি হয়ে গেছেন। আগে কেনাকাটা সব হয় ভারত, নয় ব্যাংককে করতেন। এখানে আয়-রোজগার কম, মানে ঘুষের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে, তাই দেশের বাজারে কেনাকাটা করতেই হচ্ছে। খালা শপিংয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। ঈদ শপিং বলে কথা।
খালা সকালেই বাজারে যাবেন, সে জন্য একসেট কাপড় নিয়ে নিয়েছেন, যদি ঘেমে যান তো বদলে নেবেন। আর সঙ্গে নিয়েছেন ইফতার, তিনি আবার বাইরের খাবার একদম পছন্দ করেন না। তাই রাত জেগে খাবার বানাতে হয়েছে। গাড়িতে চড়ার কিছু সময় পরই ভয়াবহ যানজট শুরু হলো। খালা তাঁর গাড়ির কাচ উঠিয়ে এয়ারকুলার ছেড়ে ঘুমাতে গেলেন। রাত জাগার ঘুম পোষানোর জন্য এর চেয়ে ভালো বুদ্ধি নেই। ব্যস, কয়েক ঘণ্টার যানজট ঠেলে খালা কয়েক ঘণ্টা শপিং শেষে যখন বাড়ি পৌঁছালেন, তখন মধ্যরাত। খালাও খুশি, আমরাও খুশি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, ঢাকা শহরে আমরা যাঁরা থাকি, তাঁদের এখনকার সঙ্গী যানজট। খালার না হয় নিজের গাড়ি আছে, স্বামীর ঘুষের চাকরি আছে, তাই চাকর-চাকরানি আছে। কিন্তু যাঁদের এসব নেই, তাঁরা ঢাকায় যানজটে কোনো কাজ করতে সাহস পান না। আমরা কি তাঁদের কথা ভাবব না?
আমার এক বন্ধুর বিয়ের দাওয়াতে কী হয়েছিল, সেটা জানিয়ে দিই। বন্ধু বিয়ে করবে শুক্রবার বাদ জুমা। বন্ধুর বিয়ে বলে কথা, তাই বেশ সেজেগুজে রওনা দিলাম। সাজতে দেরি হলেও দুপুরের আগেই রওনা দিয়েছিলাম, অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা। সেখানে গিয়ে দেখি, বিয়ের আয়োজন শেষ। বন্ধু এর পর আমাদের সঙ্গে এক বছর কথা বলেনি। সে কথা থাক, অনুষ্ঠানস্থলে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে গল্প করছে। তাঁদের সঙ্গে আলাপে বুঝতে পারলাম, এরা পরের বিয়ের অতিথি, ভয়ে আগেই চলে এসেছে যদি বিয়ে মিস হয়ে যায়। সত্যি তাঁদের বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হলাম।
আমি নিজে যানজটের পক্ষের লোক, আমি মনে করি, যানজটের মাধ্যমে দেশের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়ানো যাবে। আমরা মধ্যম আয় থেকে উচ্চ আয়ের দেশে চলে যাব। লোকজন তখন আমাদের এখান থেকে নতুন পণ্য পেয়ে মুগ্ধ হবে। যানজটের উপকারিতা অনেক—‘রাস্তাঘুম’ বলে নতুন শব্দ আমাদের অভিধানে যোগ হবে। ফলে লোকজনের জন্য কোনো সমস্যা নেই। আবার যানজটের খাবার হিসেবে শসা, পানি, গাজর, বাদাম ইত্যাদির প্রচলন রয়েছে। একে আরো উন্নত করা যায়। চিকেন ফ্রাই কিংবা চিকেন উইংস প্যাকেটে করে যানজটপ্রবণ এলাকায় বিক্রি করা যায়, যা আমাদের বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার সঞ্চার করবে। আর যাঁরা জটে আটকে থাকবেন, তাঁদের শক্তি সঞ্চয় হবে। তবে আমার এক বন্ধু সম্প্রতি এক চিঠিতে জানিয়েছেন, যানজটে আমাদের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। নিশ্চিতভাবেই আমাদের উল এবং নকশিকাঁথা শিল্প অনেকদূর এগিয়ে যাবে। এই যেমন যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় হাত তো কোনো কাজ করে না। এ সময় তাঁদের হাতে সুই-সুতা দিয়ে কাঁথা সেলাই কিংবা কাটা দিয়ে উলের সোয়েটার বোনানো যেতে পারে। তাই আমাদের সকলের বলা উচিত, যানজট জিন্দাবাদ।